বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণের পর চিৎকার করায় রাজ মামুন নামে নয় বছরের এক শিশুকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ফরিদুল ইসলামকে (২৮) ঢাকার সাভার থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্যে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
পুলিশ জানায়, সারিয়াকান্দি উপজেলার বেড়া পাঁচবাড়িয়া গ্রামের সুলতান শেখ মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) থানায় অভিযোগ করেন, তার ছেলে রাজ মামুন গত ৫ ডিসেম্বর বাড়ির পাশে মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে যায়। পরে এশার নামাজ শেষে রাত ৮টার দিকে বাড়ি ফিরছিল। জামথল বাজার মোড়ে রাস্তা থেকে দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণ করে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না দিলে তাকে হত্যার হুমকিও দেয়। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা মঙ্গলবার সারিয়াকান্দি থানায় মামলা করেন।
মামলার সূত্র ধরে সারিয়াকান্দি থানা পুলিশ ও বগুড়া ডিবি পুলিশের দল অভিযানে নামে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তারা রংপুরের পীরগাছা উপজেলার চর রহমতের আমজাদ হোসেনের ছেলে ফরিদুলকে শনাক্ত করে। মঙ্গলবার রাতে ঢাকার সাভার থেকে মুক্তিপণ দাবিকারী ফরিদুলকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে বগুড়া এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তার দেওয়া তথ্যমতে রাত ২টার দিকে সারিয়াকান্দির বেড়া পাঁচবাড়িয়া গ্রামের চরের ধানক্ষেত থেকে রাজ মামুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে ফরিদুল জানায়, কিছুদিন আগে বগুড়া সদরের এরুলিয়া এলাকায় ধান কাটতে আসে। দেনাদার ফরিদুল পরবর্তীতে বেশি মজুরির জন্য সারিয়াকান্দি উপজেলার জামথলে যায়। ৫ ডিসেম্বর সে কয়েকটা বাচ্চাকে খেলতে দেখে। এর মধ্যে একজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে। মাগরিবের সময় ব্যর্থ হলে এশার সময় রাজ মামুনকে ঘুঘু পাখি দেওয়ার প্রলোভনে ধানক্ষেতের পাশে গাছের নিচে নিয়ে যায়। রাত গভীর হলে বাড়ি যাওয়ার জন্য চিৎকার করতে থাকে রাজ। তখন ফরিদুল গলা টিপে ধরলে সে মারা যায়। এরপর ধানক্ষেতে মরদেহ ফেলে পালিয়ে যায়। পাশের একটি মুদি দোকানির মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায় ফরিদুল। পরদিন দোকানদার আজাহারকে ফোন দিয়ে রাজের বাবা সুলতানকে ডেকে নেয়। এরপর জানায়, ২০ হাজার টাকা দিলে ছেলের সন্ধান দেবে।
সারিয়াকান্দি থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, আগের অপহরণ মামলায় হত্যার ধারা যোগ হবে। একমাত্র আসামি ফরিদুলকে বুধবার বিকালে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।