X
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
১৫ আষাঢ় ১৪৩২

যে বাজারে সবজি বিক্রেতা অধিকাংশ নারী

গোলাম মওলা
১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৫৯আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:২৮

মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে রাজধানীর অলিগলিতে বসে অসংখ্য সবজি বাজার। এসব বাজারে দিনরাত হরদম চলে বেচাকেনা। এমনই এক সবজি বাজার বসে রাজধানীর মানিকনগরের ওয়াসা রোডে। এই বাজারের মূল ক্রেতা সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। তুলনামূলক কম দামে এখানে সবজি বিক্রি হয়ে থাকে। ভাসমান এই বাজারের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—এখানকার সবজি বিক্রেতাদের বেশিরভাগই নারী। অনেকে এই বাজারের নাম দিয়েছেন ‘বউ বাজার’।

অভাবের তাড়নায় সবজি বিক্রিতে আসা রাহেলা বেগম জানান, তার স্বামী রিকশা চালান। আর তিনি সবজি বিক্রি করেন। এটাই এখন তার পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিদিন তিনি কয়েক হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেন। কেনাবেচা শেষে দিনে তার লাভ থাকে প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো। রাহেলা বেগম বলেন, ‘আয় আরও বেশি হতো, কিন্তু প্রতিদিনই পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়।’ এছাড়া যার বাসার সামনে দোকান বসান তাকেও টাকা দিতে হয় বলে জানান তিনি। 

রাহেলার মতো কুলসুম খাতুনও সংসারের অভাব-অনটন মেটাতে সবজি বিক্রি করেন। নুরুন্নাহার জানান, তিনিও স্বামীকে সহযোগিতা করতেই সবজি বিক্রি শুরু করেছেন। প্রতিদিন ভোরে তার স্বামী পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে আনেন। এরপর তা দু’ভাগ করে তিনি বসেন এই বাজারে। আর তার স্বামী রিকশাভ্যানে করে অন্য এলাকায় গিয়ে বিক্রি করেন।

প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের শাক বিক্রি করেন জরিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘সংসার চালাতে গিয়ে তাকে এই পেশা বেছে নিতে হয়েছে।’

. উল্লেখ্য, আগে মানিকনগর পুকুর পাড় এলাকায় অবৈধভাবে একটি কাঁচাবাজার গড়ে উঠেছিল। সেটি উচ্ছেদ হওয়ার পর এই এলাকায় কোনও স্থায়ী বাজার নেই। তবে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মানিকনগর ওয়াসা রোডের এই বাজারে পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা কেনাকাটা করেন। বিশেষ করে এখানে সীমিত আয়ের মানুষদের বেশি দেখা যায়। অভিযোগ আছে, মাঝে মাঝে বাজারে পুলিশ হানা দেয়। এমনও দেখা গেছে, হঠাৎ করেই বাজার ফাঁকা। অর্থাৎ পুলিশ বসতে দিচ্ছে না।

আবার হঠাৎ করেই সবাই বসে পড়েন। জানা যায়, টহল পুলিশের অলিখিত অনুমতি নিয়ে এখানে বাজার বসে। এই বাজারের ক্রেতারাও বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়ে থাকে। অর্থাৎ পুলিশ চলে যাওয়ার পর কেনাবেচা শুরু হয়।  কখনও বা বাজার শুরু হতে দেরি হলে ক্রেতারা অপেক্ষা করতে থাকেন।

মাছ ও মাংসসহ সবই পাওয়া যায়

মানিকনগর এলাকার এই ভাসমান বাজারে শুধু সবজিই নয়—মাছ, মাংসসহ সবই পাওয়া যায়। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরা মাছ ও মাংস বিক্রি করে থেকে। তবে কয়েকজন নারীকেও মাঝে মধ্যে মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়।

ক্রেতারা জানান, এই বাজারে কম দামে সবজি পাওয়া যায়। এছাড়া এখানে মাছ, মাংস, ডিম ও মুরগিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্য বিক্রি হয়।

ক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, ‘মানিকনগর বাজারের বেশিরভাগ দোকানিই নারী। এখানে সব ধরনের তাজা সবজি পাওয়া যায়। তুলনামূলক দামও কম।’

শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) সরেজমিন দেখা গেছে, অন্যান্য বাজারের চেয়ে এই বাজারে বেশিরভাগ পণ্য কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর অন্যান্য বাজারে প্রতি কেজি বরবটি ৮০ টাকা করে বিক্রি হলেও মানিকনগর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ৭০ টাকায়।  কাওরান বাজারে করলার কেজি ৮০ টাকা, সিম ৫০ টাকা, দেশি আলু ৪০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৪০, পেঁয়াজের ফুল (ফুলকা) প্রতি আঁটি ২০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর মানিকনগর বাজারে এসব সবজি পাওয়া যাচ্ছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে।

. মানিকনগর বাজারে লাউ প্রতি পিস ৪০ থেকে ৪৫  টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচা পেঁপে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ক্ষীরা প্রতি কেজি ৪০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৫০ টাকা, আর কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অবশ্য ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। মধ্যম মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। আর আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজ প্রতি কেজি  বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। নিম্নমানের পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এই বাজারে আজ ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬০-১৬৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০-১৫৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির। ব্যবসায়ীরা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ২৭০-২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫০-২৭০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।

রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা করে। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা। শোল মাছের কেজি ৫৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকায়।

এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকা। ছোট ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা। চিংড়ির দাম প্রতি কেজি ৬০০-৬৫০ টাকা।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতবিরোধী কনটেন্ট করায় ক্রিয়েটরের বাড়িতে হামলার অভিযোগ
ভারতবিরোধী কনটেন্ট করায় ক্রিয়েটরের বাড়িতে হামলার অভিযোগ
ঢাকায় চিকিৎসায় এসে একই পরিবারের ৩ জনের রহস্যজনক মৃত্যু
ঢাকায় চিকিৎসায় এসে একই পরিবারের ৩ জনের রহস্যজনক মৃত্যু
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার
তারেক রহমানের ফেরা চূড়ান্ত হলে ঘোষণা দেবে বিএনপি
তারেক রহমানের ফেরা চূড়ান্ত হলে ঘোষণা দেবে বিএনপি
সর্বাধিক পঠিত
‘সবাইকে ম্যানেজ করা আছে, দুদক কিংবা কেউ কিছুই করতে পারবে না’
মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীর নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ উপপরিচালকের‘সবাইকে ম্যানেজ করা আছে, দুদক কিংবা কেউ কিছুই করতে পারবে না’
ঘরে ঢুকে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা এলাকাবাসীর
ঘরে ঢুকে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা এলাকাবাসীর
মুরাদনগরে ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় ৩ জন গ্রেফতার
মুরাদনগরে ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় ৩ জন গ্রেফতার
এনবিআরের সব চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ ঘোষণা
এনবিআরের সব চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ ঘোষণা
এনবিআরের শীর্ষ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের শীর্ষ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক