পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও কঠোর মনোভাব প্রদর্শন দেখিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীক পাওয়া কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা লড়াই করবেন তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হবে বলে আবারও ঘোষণা দিয়েছে দলটি। বুধবার (৯ মার্চ) সকালে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষে জানান, বিদ্রোহীদের শাস্তি অবধারিত। আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থানের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের বিদ্রোহীপ্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের অভিব্যক্তি হলো- কেন্দ্রের এমন কড়া হঁশিয়ারি আমলেই নিচ্ছেন না তৃণমূলের নেতারা। যোগাযোগ করা হলে তৃণমূল নেতারা বলছেন, শাস্তি যত কঠিনই হোক, তবু মাঠে থাকবেন, নির্বাচন করবেন।
মাতারবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে এনামুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহীপ্রার্থী হিসেবে এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ ও আওয়ামী লীগ সমর্থক মোহাম্মদ কাউসার সিকদার নির্বাচন করছেন। জানতে চাইলে মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ২৫ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা থাকার পরও দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাই তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে আমি নির্বাচনি মাঠে নেমেছি।
ছোট মহেশখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে মো. জিহাদ বিন আলীকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয। এখানে বিদ্রোহীপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আবদুস সামাদ। দলের কঠোর সিদ্ধান্তের কথা জানা থাকলেও এ প্রসঙ্গে বিদ্রোহীপ্রার্থী আব্দুস সামাদ বলেন, আমি বিদ্রোহীপ্রার্থী নই, আমি এই ইউনিয়নের জনগণের প্রার্থী।
কুষ্টিয়া জেলার চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন সৈয়দ আহমেদ। এ প্রার্থীর বিপক্ষে এখানে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা শেলী দেওয়ান। অভিযোগ আছে- তাকে দাঁড় করিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন। শেলী বলেন, মাঠে আছি মাঠে থাকব। রিফায়েতপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জামিরুল ইসলাম। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগেরই আরেকজন সৈনিক আবদুর রশীদ। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দলের সমর্থন পাইনি। কিন্তু এলাকার জনগণের সমর্থন পেয়েছি, তাই নির্বাচন করার সাহস পাচ্ছি।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে বরং বিস্তর অভিযোগ তুলছেন তৃণমূলের নেতারা। ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তৃণমূল ভোটাভুটি করে প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠালেও প্রভাবশালী মহলের দৌরাত্বে তৃণমূলের প্রার্থীকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বিএনপি-জামায়াত ও রাজাকারের বংশদরকে- এমন ঘোরতর অভিযোগ রয়েছে তাদের। দলের এমপি-মন্ত্রীরা আর্থিক লেনদেন করে ভিন্ন আদর্শের ব্যক্তিদের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছেন বলেও তৃণমূলের নেতারা অভিযোগ করছেন। তৃণমূলের আরও অভিযোগ হলো- টাকার কাছেই হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থীরা।
বিদ্রোহীপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব না দেখিয়ে যেসব এমপি-মন্ত্রীরা প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অস্বচ্ছ পথ অনুসরণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন। তৃণমূল নেতারা বলেছেন, এসব প্রভাবশালী মহলকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দলের জন্যেই মঙ্গল হবে। তবে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে পরামর্শ দেন তৃণমূল নেতারা।
তৃণমূলের অভিযোগ, মনোনয়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন বোর্ড গঠন করেন, তৃণমূল থেকে প্রার্থী বাছাইয়ের নির্দেশ দেন। কিন্তু স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এটি করা সম্ভব হয়নি শুধু দলের সুবিধাভোগী এমপি-মন্ত্রী ও জেলার নেতাদের কারণে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, মনোনয়ন বঞ্চিতরা প্রার্থী হতে না পেরে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন। তৃণমূলের অভিযোগ আমরা তদন্ত করেছি। সত্যতা মেলেনি। এখন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্ত- বিদ্রোহীদের ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, রাজনীতি করতে হলে সংগঠনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। এখনও সময় আছে আমি আশা করব যারা এখনও দলমনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে রয়েছেন তারা সবাই সরে আসবেন।
জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, রাজনীতি করতে হলে দলের নিয়মশৃঙ্খলা মানতে হবে। আমি ধরে নিলাম অনেক যোগ্য নেতা মনোনয়ন পাননি। তাই বলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধ করবেন- এটা মেনে নেওয়া যায় না। দল যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকে নেতা মেনে রাজনীতি করতে হবে। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেকেই দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিভিন্ন ছুঁতো খুঁজে বের করে বিদ্রোহ প্রকাশের চেষ্টা করছেন। এটা কাম্য নয়। আমি মনে করি তাদের শাস্তি পেতেই হবে।
/এএইচ/ আপ-এমএসএম