ইউক্রেনে জাহাজে থাকা ২৮ বাংলাদেশির পরিচয় মিলেছে

ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে বাংলাদেশি পণ্যবাহী ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে রকেট হামলায় খবর শুনে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) কার্যালয়ে ছুটে এসেছেন নাবিক ও ক্রুদের স্বজনরা। ইতোমধ্যে ২৮ নাবিক ও ক্রু’র নাম-পরিচয় জানা গেছে। তাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চলছে।

বৃহস্পতিবার (০৩ মার্চ) সকাল থেকে বিএসসি কার্যালয়ে আসতে থাকেন নাবিকদের স্বজনরা। ইতোমধ্যে অনেকের পরিবার এসেছেন। তাদের মধ্যে জাহাজে কর্মরত নাবিক মোহাম্মদ হানিফের খোঁজে এসেছেন তার সন্তান মো. কায়সার হামিদ। তিনি বলেন, ‘রকেট হামলার আগে বাবার সঙ্গে কথা হয়েছিল। ওই সময় জানিয়েছেন ভালো আছেন। কিন্তু হামলার পর থেকে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এজন্য বাবার খোঁজে এখানে ছুটে এসেছি।’

বিএসসি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইউক্রেনে অবস্থান করা ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে ২৯ জন নাবিক-ক্রু ছিলেন। এর মধ্যে প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান আরিফ মারা গেছেন। জাহাজের মাস্টার হিসেবে রয়েছেন জি এম নূর-ই আলম। সহকারী মাস্টার হিসেবে আছেন মো. মনসুরুল আমিন খান।

আরও পড়ুন: ইউক্রেন থেকে সকালেও ফোন করেছিলেন আরিফ, বলেছিলেন স্বপ্নের কথা

জাহাজে থাকা অন্যরা হলেন- সেলিম মিয়া, রমা কৃষ্ণ বিশ্বাস, মো. রোকনুজ্জামান রাজিব, ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি, ফয়সাল আহমেদ সেতু, মোহাম্মদ ওমর ফারুক, সৈয়দ আসিফুল ইসলাম, রবিউল আউয়াল, সালমান সরওয়ার সামি, ফারজানা ইসলাম মৌ, মো. শেখ সাদি, মো. মাসুদুর রহমান, মো. জামাল হোসাইন, মোহাম্মদ হানিফ, মো. আমিনুর ইসলাম, মো. মহিন উদ্দিন, হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব, সাজ্জাদ ইবনে আলম, নাজমুল উদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম, সরওয়ার হোসাইন, মো. মাসুম বিল্লাহ, মোহাম্মদ হোসাইন, মো. শফিকুর রহমান, মো. আতিকুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।

বিএসসির জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধিতে’ রকেট হামলা

এর আগে অলভিয়া বন্দরে নোঙর করা বিএসসির জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধিতে’ রকেট হামলায় থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা যান। জাহাজের বাকি ২৮ জন নাবিক ও ক্রু অক্ষত আছেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) নির্বাহী পরিচালক পীযূষ দত্ত।

তিনি বলেন, ‌‘জাহাজে থাকা নাবিক ও ক্রুদের উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার আগে বন্দরের তীর থেকে কাউকে সেফটি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ক্লিয়ারেন্স পেতে হবে। ক্লিয়ারেন্স পেলে আমরা তাদের যেতে অনুমতি দেবো।’

পীযূষ দত্ত আরও বলেন, ‘নাবিক ও ক্রুদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে ফিরিয়ে আনাই প্রথম লক্ষ্য। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা এ নিয়ে কাজ করছে। আশা করছি, তাদের ফিরিয়ে আনতে পারবো আমরা।’

আরও পড়ুন: বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না আরিফের

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, ‘অলভিয়া বন্দরে নোঙর করে রাখা বিএসসির জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে হামলার ঘটনায় জাহাজে আগুন ধরে যায়। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিট ও ইউক্রেন সময় ৫টা ২৫ মিনিটে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার পর জাহাজে শর্টসার্কিটের কারণে আলো জ্বলছে না। চালু হচ্ছে না জাহাজের ইঞ্জিন। ইমার্জেন্সি জেনারেটর দিয়ে কয়েক ঘণ্টা পর পর আলো জ্বালানো হচ্ছে। জাহাজটি মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে হবে।’

নিহত হাদিসুর রহমান

তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজে থাকা সবাই বাংলাদেশি। এর মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন। বাকি ২৮ জনের মধ্যে কয়েকজন নারীও আছেন। তাদের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তারা সুস্থ আছেন। তাদের কীভাবে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, আমরা সে চেষ্টা করছি।’

আরও পড়ুন: আরিফের লাশ ফেরত আনার দাবি স্বজনদের 

হামলায় নিহত হাদিসুর রহমানের জন্ম ১৯৯৩ সালের ১৮ মে। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে। তার মৃত্যুতে শোকের মাতম বইছে গ্রামের বাড়িতে।

বিএসসি কার্যালয় সূত্র জানায়, জাহাজটি ইউক্রেনের বন্দর থেকে পণ্য ভর্তি করে ইতালির বন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় ওই বন্দর থেকে পণ্য লোডিং কাজ বাতিল করা হয়। এ কারণে জাহাজটি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে নোঙর করে রাখা হয়। জাহাজটিতে অন্তত ২৫ দিনের রসদ মজুত আছে। তুরস্কের এরেগলি বন্দর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি খালি জাহাজটি অলভিয়া বন্দরের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। ২২ ফেব্রুয়ারি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছে। এরই মধ্যে ঘটে দুর্ঘটনা।