‘নাপা সিরাপ’ খেয়ে ২ ভাইয়ের মৃত্যুর অভিযোগ, বিভাগীয় তদন্ত শুরু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ‘নাপা সিরাপ’ খেয়ে দুই ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালকের গঠিত তদন্ত কমিটি।

রবিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তদন্তকাজ শুরু করেন। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. রফিক সালেহীন ও কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন। 

তদন্তের অংশ হিসেবে তারা সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সোলাইমান মিয়া এবং কর্তব্যরত স্টাফ নার্সদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা। পরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে বৈঠক করেন। বৈঠকে চিকিৎসকের পক্ষ থেকে কোনও গাফিলতি ছিল কিনা জানার চেষ্টা করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা হাসপাতাল থেকে বের হন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য ও কুমিল্লার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ‘ওষুধ এবং চিকিৎসকের গাফিলতি আছে কিনা খতিয়ে দেখছি আমরা। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে। পরে আশুগঞ্জের দুর্গাপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে ইটভাটা শ্রমিক সুজন খানের দুই শিশু সন্তান ইয়াছিন খান এবং মোরসালিন খান জ্বরে আক্রান্ত হয়। গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) রাতে বাড়ির পাশের বাজারের ‘মা ফার্মেসি’ থেকে বেক্সিমকোর তৈরি নাপা সিরাপ নিয়ে শিশুদের সেবন করান। এরপর ওই দুই শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদেরকে রাতে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে হাসপাতালের চিকিৎসক শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এ অবস্থায় বাড়ি ফেরার পথে ইয়াছিন ও বাড়িতে ফেরার পর মোরসালিন মারা যায়। এ ঘটনার কারণ উদঘাটনসহ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন দুই শিশুর বাবা-মা।

আরও পড়ুন: দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ

এ নিয়ে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে শনিবার (১২ মার্চ) সকালে পৃথক দুটি কমিটি করা হয়। এদিকে, জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নির্দেশনার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব ওষুধের দোকানে নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবার রাতে সমিতি এ সিদ্ধান্ত জানায়। শনিবার সকাল থেকে প্রতিটি ওষুধের দোকানে নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউছার বলেন, ‘আশুগঞ্জের দুর্গাপুরে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনার পর জনস্বার্থে আমরা নাপা সিরাপ বিক্রি না করার জন্য জেলার সব ব্যবসায়ীকে নির্দেশনা দিয়েছি। এখন মাঠে নেমেছি। প্রতিটি দোকানে গিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দিচ্ছি। কেউ এই সিরাপ বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘মারা যাওয়া দুই শিশুর ময়নাতদন্ত হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করেছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নাপা সিরাপের কারণে মৃত্যু হয়ে থাকলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’