পানি বাড়ছে সুনামগঞ্জের হাওরে, মাছ ও রোপা আমনের ক্ষতি

সুনামগঞ্জে বন্যাটানা প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে মেঘালয় বেসিনে পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। তবে ১৪ আগস্ট থেকে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানিতে কয়েকশ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন চারা নষ্ট হয়েছে বলে জানান কৃষকরা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক আরও জানান, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার হাওর এলাকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার নাগাদ খরচার হাওরের পানিতে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদরের পুরান বাজার, ফতেহপুর বাজার, ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা বাজার  এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে। ক্রমাগত পানি বৃদ্ধির ফলে এসব উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার জানান, উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ফতেহপুর গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবার বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান এলাকাবাসী।  সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে শুক্রবার  সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ শহরের বড়পাড়া, নবীনগর, মল্লিকপুর ওয়েজখালী, কালীপুর, জলিলপুর, পশ্চিমবাজার, তেঘরিয়া, সাববাড়িরঘাট ও সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বিশ্বম্ভরপুর এলাকা পরির্দশন করেছেন।

সুনামগঞ্জে বন্যা

পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানিতে  কয়েকশ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলেন জানান মাছচাষীরা। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিরখলা সড়ক ঢলের পানিতে ডুবে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ তাহিরপুরে সড়কে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ফতেহপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের বেশ কয়টি অংশ বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বসত বাড়ি ও আঙ্গিনায় পানি প্রবেশ করায় গবাদিপশু নিয়ে মানুষ বিপাকে পড়েছেন।

ফতেপুর গ্রামের বলরাম দাস বলেন, ‘গত রাত থেকে ঘরের ভেতরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। কোখাও সরে যেতে পারিনি। সারারাত এভাবেই থাকতে হয়েছে। পরিবার-পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে পানিতেই ছিলাম।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পুরান বারুংকা গ্রামের ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত থেকে হাওরের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বাড়ার কারণে মানুষ খুব কষ্টে আছে।’ একই গ্রামের মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দিন বৃষ্টি। তাই কর্মজীবী মানুষ কোথাও যেতে পারেন না। বেকার সময় কাটছে তাদের।’ এ গ্রামের বাসিন্দা মো. তানভীর আহমদ বলেন, ‘হাওরের পানি বেড়ে সড়ক ভেঙে গেছে। জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।’  সুনামগঞ্জে বন্যা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জাহেদুল হক জানান, ‘রোপা-আমন যা রোপন করা হয়েছিল তা পানিতে তলিয়ে গেছে। দু’একদিনের মধ্যে পানি না কমলে ব্যাপক ক্ষতি হবে। এ পর্যন্ত জেলার তাহিরপুর, দোয়ারা বাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও সদর উপজেলার প্রায় এক হাজার হেক্টর রোপা-আমন পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি প্রশাসনের রয়েছে। যেখানে যা প্রয়োজন সেখানে সেরকম সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। ইতোমধ্যে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে  নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সব স্থরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা সার্বক্ষণিক এলাকার পরিস্থিতে আমাকে জানাচ্ছেন।’

সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ‘বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সুনামগঞ্জের মানুষ। বছরের শুরুতে অকাল বন্যায় ফসলহানি, কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলা করা হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’

/এফএস/ 

আরও পড়ুন- 

ধরলার পা‌নি বিপদসীমার ২২ সে‌ন্টি‌মিটার ওপরে
টানা বৃষ্টিতে তিস্তাসহ নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত