সালথায় তাণ্ডব: ‘সরাসরি অ্যাকশনে’ যাওয়ার কথা বললেন বিভাগীয় কমিশনার

ফরিদপুরের সালথায় গত সোমবার রাতে সংঘটিত তান্ডবের সাথে জাড়িত এবং মামলার আসামি হিসেবে মোট ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনকে রিমান্ডে এনে জ্ঞিাসাবাদ চলছে।

এদিকে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান শুক্রবার (৯ এপ্রিল) ক্ষতিগ্রস্ত ফরিদপুর সালথা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকরা তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনও বক্তব্য নয় সরাসরি অ্যাকশনে যেতে চাই।’

বিভাগীয় কমিশনার প্রথমে উপজেলা পরিষদের নিচতলায় অবস্থিত কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এরপর একে একে ত্রাণের গোডাউন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন সংলগ্ন গ্যারেজ, ভূমি অফিস, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন এবং সবশেষে থানা পরিদর্শন করেন।

“সালথায় তাণ্ডব: পুলিশি অভিযানে এলাকা পুরুষশূন্য”

এসময় উপস্থিত ছিলেন, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) জামাল পাশা, সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া প্রমুখ।

এদিকে সালথার তাণ্ডবের ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাঁচটি মামলায় ২৬১ জনের নাম উল্লেখ করা মামলার মোট আসামির সংখ্যা প্রায় চার হাজার।

পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচটি মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি আলাদা আলাদা করে যোগ করলে তার সংখ্যা ১৭ হাজারের কাছাকাছি হবে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা চার হাজারের বেশি হবে না। কেননা অজ্ঞাত নামা একই ব্যক্তিরা ওই সব মামলার আসামি।

“সালথায় তাণ্ডবের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আ.লীগের কেন্দ্রীয় ৬ নেতা”

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জামাল পাশা বলেন, সালথার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন ঢাকা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি হলেন মিরান মোল্লা (৩৫)। তিনি উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের দরজাপুরুরা গ্রামের আব্দুর রব মোল্লার ছেলে। গত সোমবার তাণ্ডবের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। বুধবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

জামাল পাশা আরও বলেন, এছাড়া আরও দুই জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। এ দুই জন হলেন সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙারদিয়া গ্রামের আবুল খায়ের (২৫) ও ভাওয়াল ইউনিয়নের গোপালীয়া গ্রামের মো. আমীর (৩০)। এদের মধ্যে আবুল খায়ের পুলিশি প্রহরায় ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ট্রমাসেন্টারে এবং মো. আমীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়নি।

“সালথায় তাণ্ডব: ৫ মামলায় আসামি ১৭ হাজার”

এ পর্যন্ত আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে ৪৮ জনকে। এর মধ্যে ১১ জনের দুই দিন করে এবং ১৫ জনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকি ২২ জনের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে শুক্রবার জেলার মূখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার। এ সময় তার গাড়ি থেকে নেমে কয়েকব্যক্তি বাজারে উপস্থিত কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা গুজব ছড়িয়ে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা ও লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন সরকারি দফতর ও থানায় এই তাণ্ডব চালায়। দুটি সরকারি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।