শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবির কারণ দুই চালকের প্রতিযোগিতা

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ রূপসী-৯-এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসারউদ্দিন ডুবে যাওয়ার ঘটনার জন্য দুই চালকের প্রতিযোগিতাকে দায়ী করা হয়েছে। কে কার আগে যাবে এ নিয়ে দুই চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছিল। মূলত এই কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে।

বুধবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ শামীম বেপারী জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।

জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। প্রতিবেদনে লঞ্চডুবির কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দুই চালকের মধ্যে (কার্গো জাহাজ ও লঞ্চচালক) চালানোর প্রতিযোগিতা। ওই দিনের ঘটনার জন্য প্রতিযোগিতাই আমার কাছে প্রধান কারণ মনে হয়েছে।’

আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: জাহাজের মাস্টারসহ ৮ জন রিমান্ডে

তিনি বলেন, ‘কে আগে শীতলক্ষ্যা সেতুর নিচে দিয়ে পার হবে দুই চালকের মধ্যে এই  প্রতিযোগিতা ছিল। এখানে একটা বড় জাহাজ অন্যটা ছোট লঞ্চ। অথচ দুই চালক প্রতিযোগিতা করে দ্রুতগতিতে নৌযান চালিয়েছে। যখন একে-অপরের কাছাকাছি চলে এসেছিল তখন গতি নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পায়নি। এজন্য সংঘর্ষ ঘটেছে।’

জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ আরও বলেন, ‘প্রতিবেদনে নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে অনেকগুলো সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এসব সুপারিশ নিয়ে আমরা কাজ করবো। এছাড়া যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম বেপারী বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। কমিটির সঙ্গে যারা কাজ করেছেন সবাই মিলে দুর্ঘটনার একটি চিত্র তুলে ধরেছি। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি আমরা। দুর্ঘটনার কারণ এবং বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আমরা তুলে ধরেছি, শীতলক্ষ্যা নদীতে অসম নৌযানের প্রতিযোগিতা চলছে। কার আগে কে যাবে, এটা যেন না হয়। ছোট ছোট লঞ্চের পরিবর্তে যেন বড় নৌযান নামানো হয়। যেহেতু ছোট লঞ্চগুলো সামান্য ধাক্কা লাগলে ডুবে যায়, সেজন্য এগুলো তুলে দিতে হবে।’

আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: আরও একজনের লাশ উদ্ধার

এর আগে রবিবার (২০ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকায় এমভি রূসপী-৯ কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী এমএল আফসারউদ্দিন লঞ্চটি ডুবে যায়। ঘটনার সময়ে ১৫-২০ জন যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন। পরে টানা তিন দিন অভিযান চালিয়ে নারী-শিশুসহ ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

এ ঘটনার পরদিন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এই দুর্ঘটনার জন্য দুই চালককে দায়ী করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান।