সরকার একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে: গয়েশ্বর

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘ডান্ডাবেড়ির কারণে মায়ের মরদেহ কবরে নামাতে না পারা অমানবিক। এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই সরকার একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, যা দেশ-বিদেশে নিন্দনীয় হচ্ছে।’

রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজমের বাড়িতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। আলী আজমকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় নেওয়ার ঘটনায় পরিবারকে সমবেদনা জানাতে শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা তার বাড়িতে যান। পরে আলী আজমের পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং তার স্ত্রীর হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন।

আরও পড়ুন: হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজা পড়ালেন বিএনপি নেতা

আলী আজমকে একটি রাজনৈতিক মামলায় ২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ১৮ ডিসেম্বর তার মা সাহেরা বেগম (৬৭) মারা যান। ২০ ডিসেম্বর আলী আজম প্যারোলে মুক্তি পেয়ে হাতকরা ও ডান্ডাবেড়ি পড়া অবস্থায় মায়ের জানাজার নামাজ পড়ান। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরালের পর সমালোচনা ঝড় ‍ওঠে।

আলী আজমের মায়ের কবর জিয়ারত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অন্য নেতারা

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি নিয়ে আলী আজমকে মায়ের জানাজা পড়াতে হয়েছে। এ ঘটনায় দেশের জনগণ হিসেবে আমরা লজ্জা পাচ্ছি। এর জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়, বাংলাদেশের জনগণ দায়ী নয়, দায়ী ফ্যাসিবাদী সরকার।’

আলী আজমের ছোট ভাই আতাউর রহমান বলেন, ‘ভাই কারাগারে থাকায় এবং জামিন না হওয়ায় মা সাহেরা বেগম দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে ১৮ ডিসেম্বর বিকালে মারা যান। মিথ্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে পুলিশ আমার ভাইকে গ্রেফতার করেছে। সে ঘটনার সময় ওই স্থানে ছিল না। রাজনৈতিক জীবনে ভাইয়ের এটাই প্রথম জেলে যাওয়া। জানাজার দিন সকাল সোয়া ১০টার দিকে ভাইকে বাড়িতে নিয়ে আসে পুলিশ। ভাই মায়ের জানাজা পড়ান। পরে অল্প সময়ের মধ্যে মরদেহ কবরস্থানে নেওয়া হয়। তার হাতকড়া এবং পায়ের ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলাম পুলিশকে। কিন্তু পুলিশ আমাদের কথা রাখেনি। দাফন শেষ না হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে ভাইকে আরেকটু সময় থাকার এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ চাইলেও দেওয়া হয়নি। পানি খেতে চাইলে তাকে সেই সুযোগও দেয়নি পুলিশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাইয়ের দুটি সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে উঠবে। ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। রাজনীতি করলেও আগে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। সে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। শিশু সন্তান এবং এলাকার সাধারণ মানুষ ও মুসল্লিদের সামনে দাগি আসামির মতো ভাইকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হেয় করা হয়েছে।’

কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, ‘আলী আজম খানকে পুলিশ যে মামলায় গ্রেফতার করেছে ওই মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল সালাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, মজিবুর রহমান, গাজীপুর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. সফিকুল ইসলাম আকন্দ, সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নানসহ দলের জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। তারা মরহুমার কবর জিয়ারত করেন এবং শোকাহত পরিবারের হাতে আর্থিক সহযোগিতা তুলে দেন।