বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাসমান বীজতলা

ভাসমান বীজতলা বন্যা ও জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান কচুরিপানার বেডে সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় এ বছর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়কাশিয়া বিরামপুর ইউনিয়নের নাকডরা বিলে পরীক্ষামূলক রোপা আমনের ভাসমান বীজতলা প্রদর্শনী তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পটি সফল হওয়ায় এলাকার কৃষকদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ পদ্ধতিতে সরাসরি মাটিতে বীজতলা তৈরি না করেও ধানের চারা উৎপাদন সম্ভব হবে। ফলে বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে বীজতলা নষ্ট কিংবা তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে কৃষকরা।

নাকডরা গ্রামের কৃষক সিজান মিয়া জানান, ভাসমান বীজতলায় যে চারা উৎপাদন হয়েছে তাতে তারা খুবই খুশি। তাদের বীজতলা দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার পোগলা ইউনিয়নের গুটমণ্ডল গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, বীজতলা নষ্ট হওয়ার কারণে এ বছর কোনও আমনের ফসল পাওয়া যাবে না। ফলে সারা বছর চাল কিনে খেতে হবে স্ত্রী সন্তান নিয়ে।

জেলার বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার জানান, বিকল্প পদ্ধতি ছাড়া আমন আবাদ সম্ভব নয়। প্রতি বছরই বন্যা হয় এবং কম বেশি ফসলের ক্ষতি হয়। ভাসমান পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করলে কৃষক ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মফিজুল ইসলাম নাফিজ জানান, সরাসরি মাটিতে আমনের বীজ বপন না করে কাঁচা কচুরিপানা তিন ফুট পরিমাণ উচু করে পচিয়ে বেড তৈরি করে অঙ্কুরিত ধান বীজ বুনতে হয়। এতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। বীজতলা তৈরি করতে কোনও বাঁশের চাটাইয়ের মাঁচা কিংবা কলা গাছের ভেলা বানাতে হয় না। স্বাভাবিক বীজতলার মতো এত খরচও হয় না। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা লাভবান হবে এবং বন্যাসহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিরক্ষা সম্ভব হবে।

প্রকল্পটি সফল হওয়ায় এলাকার অন্য কৃষকদের মাঝেও আগ্রহ বেড়েছে। কারণ মাটিতে বীজতলা তৈরি করতে হলে জমি হালচাষ করতে হয়। সেচ দিতে হয়। এই প্রযুক্তিতে এ সব করতে হয় না।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি সময়ের বন্যায় নেত্রকোনার সাত উপজেলায় ২৭৭ হেক্টর জমির বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে আমনের বীজের অভাবে এই মৌসুমে আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নেত্রকোনার খামারবাড়ির উপ-পরিচালক বিলাশ চন্দ্র পাল বলেন, আমরা গত বছরও পরীক্ষামূলকভাবে ভাসমান বীজতলা করার জন্য বলেছি। কৃষকরা মাত্র ২৫ দিনে সবল চারা তৈরি করতে পারছে কোনও প্রকার খরচ ছাড়াই। এ বছরও জেলার ছয়টি উপজেলায় ভাসমান আমনের বীজতলা করেছে। যারা এই পদ্ধতিতে আমনের বীজতলা করেছে, তারা জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর আমনের চারা রোপন করতে পারবে। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো যত বন্যাই হোক চারার কোনও ক্ষতি হবে না।

আরও পড়ুন:

শেরপুরে স্কুলমাঠে গবাদিপশুর হাট, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি