‘মায়ের পর বাবাও ফিরলেন, তবে লাশ হয়ে’

‘মায়ের পর বাবাও ফিরে এসেছেন। কিন্তু তাকেও পেয়েছি মৃত অবস্থায়। হয়তো মাকে ছাড়া এই পৃথিবীতে তিনি থাকতে পারবেন না। তাই মায়ের পথে গিয়েছেন। আমরা দুই ভাই সারাটা জীবন তাদের ছাড়া কেমন করে থাকবো? ছোট ভাইটাকে সামলাবো কী করে?’ 

পঞ্চগ‌ড়ের বোদা উপজেলায় কর‌তোয়া নদী‌তে নৌকাডু‌বির ঘটনায় মা-বাবাসহ ছয় স্বজনকে হারানো উজ্জ্বল কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে করতোয়ার আউলিয়ার ঘাট এলাকা থেকে তার বাবা হরি কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই স্থানীয় শ্মশান ঘাটে সৎকার করা হয়েছে। উজ্জ্বল ও তার ছোট ভাই অজয় মিলে বাবার চিতায় আগুন দেন।

আরও পড়ুন: ‘মা ফিরেছে লাশ হয়ে, বাবা তো ফিরলো না’

এর আগে সোমবার দুপুরে উজ্জ্বলের মা কণিকা এবং বিকালে ফুফু পারুলের লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। পরে করতোয়ার আরও কিছুটা ভাটিতে তার মামার শ্বশুর নিখিল চন্দ্রের লাশ উদ্ধার করা হয়। আজ দুপুর পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন তার খালা মনিকা ও নানা সরেন্দ্র নাথ। সকালে হরি কিশোরের সঙ্গে একই গ্রামের সেন্টুর লাশও উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন তার প্রতিবেশী জগদ্বিশ। এক গ্রামের এত মানুষের মৃত্যুতে গ্রামবাসী শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন।

গত রবিবার দুপুরে বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকা থেকে পূজা উদযাপন উপলক্ষে বদেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার সময় পূণ্যার্থী বহনকারী নৌকা ডুবে যায়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ৬৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। এখনও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাড়েয়া বামনহাট ইউ‌নিয়ন প‌রিষদ কার্যাল‌য়ে স্থা‌পিত জেলা‌ প্রশাস‌নের জরুরি তথ্য ও সহায়তা কে‌ন্দ্রের দা‌য়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে করতোয়া তীরের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, মৃতদের পরিবারদের পুনর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে মৃতদের পরিবারের সদস্যদের সহায়তা করবেন।

আরও পড়ুন: একের পর এক ভেসে উঠছে লাশ

নৌকাডুবির ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‌‘আউলিয়ার ঘাটে করতোয়ার ওপর সেতু নির্মাণের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকেও অনুমোদন হয়েছে। সেতু হলে জনগণের দুর্ভোগ নিরসন হবে।’

নৌকাডুবির ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় জানান, অধিকাংশ লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের সৎকারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাথাপিছু ২০ হাজার এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

আরও খবর:

দেড় মাস আগে বিয়ে, করতোয়ায় বিচ্ছেদ

ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী ছিল নৌকায়, নদীর পাড়ে আহাজারি

যে কারণে করতোয়ায় ভয়াবহ নৌকাডুবি