দিনাজপুরে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার

‘মুই খাই না খাই দুই নাতিক মানুষ করিছু, তারা কই গেলো’

‘মুই এখন কাক ভাই কমু রে, ভাইগুলা কই গেলো রে। কেন এরকম হইলো! মুই খাই না খাই দুই নাতিক মানুষ করিছু। তারা কই গেলো!’

দুই নাতির লাশ উদ্ধারের পর দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর সময় কথাগুলো বলছিলেন আর কাঁদছিলেন বৃদ্ধা আছিয়া খাতুন। 

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সকালে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে রিমন (৭) ও ইমরানের (৩) লাশ উদ্ধার করা হয়। তারা বিরল পৌরসভার শংকরপুর ঘোড়ানীর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। 

আরও পড়ুন: বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত কক্ষে ২ শিশুসন্তানের লাশ, বাবা ‘পলাতক’

পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, শরিফুল ও তার স্ত্রী উম্মে কুলসুমের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। স্বজন ও প্রতিবেশীরা একাধিকবার তাদের ঝগড়া মীমাংসা করে দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। এর মধ্যে কুলসুম ঢাকায় গিয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি শুরু করেন। সেখান থেকে গত কয়েকদিন আগে স্বামীর কাছে তালাকনামা পাঠান। গতকাল সন্ধ্যায় দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন শরিফুল। এ সময় মা আছিয়া খাতুনকে বলেন, বাচ্চাদের শীতের কাপড় কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছেন। কিন্তু এরপর আর বাড়ি ফেরেনি তারা। ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন শরিফুল।

রিমন ও ইমরানের দাদি আছিয়া খাতুন বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ সকালে শরিফুল বাড়িতে ফোন করেন জানায়, স্কুলে দুই সন্তানের লাশ পড়ে আছে। পরে সেখানে গিয়ে একটি পরিত্যক্ত কক্ষে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।’

দুই নাতিকে হারিয়ে দাদি আছিয়া খাতুনের কান্না থামছেই না

দুই শিশুর দাদা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‌‘রাতে আমি বাড়ি ফিরে শুনি নাতিদের নিয়ে আমার ছেলে শীতের কাপড় কিনতে বাজারে গেছে। কিছুদিন আগে আমার ছেলের বউ ডিভোর্স লেটার দিয়েছে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মোবাইল ফোনে ঝগড়া-বিবাদ চলছিল। হয়তো এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার ছেলে তার সন্তানদের হত্যা করছে। এখন তো আমি আমার ছেলেরও খোঁজ পাচ্ছি না। সে কোথায় আছে জানি না। সকালে শুধু মোবাইলে কথা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সকাল থেকেই আমি তাদের খুঁজছিলাম। এদিক ওদিক খুঁজে না পেয়ে সকাল সাড়ে আটটার দিকে আমার ছেলে ফোন করে জানায়, তোমাদের নাতিদের খাওয়াতে নিয়ে এসেছি। ওদের দেখতে চাইলে স্কুলে আসো। স্কুলে আসার পর আমি স্কুলের পরিত্যক্ত কক্ষের বাইরে কঠ জুতা পড়ে থাকতে দেখে খুঁজতে শুরু করি। পরে সিমেন্টের বস্তা দিয়ে ঢাকা দেওয়া অবস্থায় দুই নাতির মরদেহ দেখতে পাই।’

দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘দুই শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাদের বাবা নিখোঁজ। তার সন্ধানে কাজ চলছে। তাকে পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। সন্দেহভাজনদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ঘটনায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।’