আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের সঙ্গে ইমরান সমর্থকদের সংঘর্ষ, শুনানি বাতিল

পাকিস্তানে আদালত প্রাঙ্গণে ব্যাপক সংঘর্ষের পর তোশাখানা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শুনানি বাতিল করেছে ইসলামাবাদের একটি আদালত। পুলিশ জানিয়েছে, ইমরানের সমর্থকরা আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে।

ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান খান যখন শুনানিতে হাজির হতে ইসলামাবাদ রওনা দেয়, এর ঘণ্টাখানেক পর লাহোরে তার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ইমরানের বাড়িতে কেবল তার স্ত্রী বুশরা বেগম ছিলেন।

পুলিশ যখন ব্যারিকেড সরিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে, তখন বাড়ির সামনে থাকা ইমরানের সমর্থকদের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় আহত হন ১০ জন, ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় ৩০ জনকে।

 

 

ইমরান অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সবগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইনের শাসনে বিশ্বাস করি বলেই আজ আদালতে এসেছি।’

রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছি।’

অন্যদিকে সরকার বলছে, ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।

এর আগে লাহোর হাইকোর্ট শুক্রবার পিটিআই চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ৯টি মামলায় সুরক্ষামূলক জামিন দেয়। লাহোর ও ইসলামাবাদে দায়ের করা এসব মামলা সন্ত্রাসের অভিযোগে করা হয়েছে।

 

 

এ ছাড়া ৮ মার্চ লাহোরে ইমরানের বাসভবন জামান পার্কে তাকে গ্রেফতারে পুলিশের কাজে বাধাদানে সহিংসতার অভিযোগের দুটি মামলা রয়েছে।

তোশাখানায় মামলায় তাকে গ্রেফতার করতে দুই দফা জামান পার্কে অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু দুই দফাতে তারা ব্যর্থ হয়। পরে আদালতের নির্দেশ তাকে গ্রেফতারের অভিযান বাদ দেয় পুলিশ।

এএফপি জানায়, ইসলামাবাদে এলিট কমান্ডো এবং সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াডসহ প্রায় ৪ হাজার নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে ইসলামাবাদে ঢুকতে ইমরানের গাড়িবহরকে বাধা দিতে শিপিং কন্টেইনার এবং বড় ট্রাক নিয়ে হাইওয়ে অবরোধ করে পুলিশ। লাঠিসোঁটা ও টিয়ার গ্যাসের ক্যানিস্টারে সজ্জিত পুলিশ সদস্যরা অবশ্য ইমরানকে আটকায়নি।

বহর যখন আটকে ছিল তখন ইমরান খান কথা বলেন বিবিসির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বছরের শেষের দিকে সাধারণ নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে আমাকে জেলে ঢুকানোর চেষ্টা করছে সরকার।’

সপ্তাহের শুরুতে তিনি বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘আমি জেলে থাকি বা না থাকি, তারা (সরকার) আমার দলের জয় ঠেকাতে পারবে না।’

এদিকে, পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এক টুইটে গত কয়েকদিনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘গত কয়েকদিনের বিদ্বেষ, ফ্যাসিবাদী আরচণ এবং জঙ্গি প্রবণতাকে প্রকাশ করেছে ইমরান খান। তিনি মানবঢাল হিসেবে তার সমর্থকদের ব্যবহার করছেন।’

পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে গত বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছিল ইমরান খানকে। সেই থেকে চলতি বছরের শেষের দিকে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ ও বক্তৃতা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছেন ইমরান খান। মাঝখানে তোশাখানা মামলায় ইমরানকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন।    

এ ছাড়া গত নভেম্বরে একটি সমাবেশে হত্যাচেষ্টার জন্য শাহবাজকে দায়ী করেছেন ইমরান। ওই হামলায় পায়ে গুলি লাগে পিটিআই প্রধানের।

ইমরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগসহ একাধিক আদালতে মামলা রয়েছে। নিরাপত্তা ঘাটতির জন্য এসব মামলার শুনানিতে উপস্থিত হচ্ছেন না বলেও দাবি করেছেন তিনি। সূত্র: বিবিসি