প্রসঙ্গত, গত ২৪ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মা রোকসানা বেগম তার লিভারের ৬০ শতাংশ দান করেন ছেলে সিরাতুল ইসলামকে। এদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত লিভার প্রতিস্থাপনের কার্যক্রম চলে। বিএসএমএমইউর হেপাটোবিলিয়ারি ও প্যানক্রিয়েটিক এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমান খানের নেতৃত্বে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়সহ প্রায় ৬০ জনের একটি দল এই কার্যক্রমে সেদিন অংশ নেয়। সফলভাবে লিভার প্রতিস্থাপনের পর ২৫তম দিনে মা ও ছেলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এ উপলক্ষে তাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে ডা. সাইফ উদ্দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সিরাতুল ইসলামের মা রোকসানা বেগম বলেন, ‘গত রমজানে অনেক রাতে সিরাতুল অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন ডা. সাইফ উদ্দিনকে ফোন করলে তিনি সিরাতুলকে নিয়ে আসতে বলেন। একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিরাতুলকে ভর্তি করা হলে সেখানে সারা রাত এই চিকিৎসক জেগে ছিলেন।’ তিনি বলেন, এই লিভার প্রতিস্থাপনের পর যেদিন সিরাতুল প্রথম ভাত খায়, সেদিন ডা. সাইফ উদ্দিন তার বাসা থেকে খাবার রান্না করে আনেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. সাইফ বলেন, ‘সেটা ছিল রোজার ঈদের ঠিক দুদিন আগের ঘটনা। সিরাতুলের মা আমাকে ফোন করে ছেলের অসুস্থতার কথা জানান। তাকে বললাম, ঢাকায় নিয়ে আসতে। তারা যখন ঢাকায় পৌঁছান, তখন সিরাতুল অচেতন, জ্ঞান নেই। এরপর যখন তার জ্ঞান ফেরে, তখন সে চোখের সামনে আমাকে দেখতে পায়। ওর সেই তাকানোর মায়ায় পড়ে যাই আমি। এরপর সারা রাতই ছিলাম ওর কাছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেটার প্রতি আমার অন্য রকমের একটা সফট কর্নার কাজ করে। কেন করে, জানি না।’
সিরাতুলের জন্য খাবার আনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ডা. সাইফ বলেন, ‘ভাত আর রুই মাছ ভুনা নিয়ে এসেছিলাম।’ কেন আনলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছু না। এটা খুব সামান্য একটি বিষয়।’
সে সামান্য বিষয়টিই সিরাতুলের মায়ের কাছে অসামান্য হয়ে উঠেছে মন্তব্য করলে এই চিকিৎসক বলেন, ‘‘আজ সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ভিসিসহ সবার সামনে তিনি আমার নাম বলছিলেন। পরে ভিসিকেও মন্ত্রী জিজ্ঞেস করেছেন সাইফ কে? তখন ‘ডা. সাইফ’ বলে আমাকে দেখিয়ে দেন ভিসি।’’
উল্লেখ্য, লিভার প্রতিস্থাপনের আগে থেকেই সিরাতুল ইসলামের চিকিৎসা করে আসছিলেন ডা. সাইফ।
আরও পড়ুন: ‘যতদিন বেঁচে থাকবো, মা ও চিকিৎসকদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো’