নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ছাত্রী

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) প্রায় দুই হাজার ছাত্রী। শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে আতঙ্কিত রয়েছেন তারা।  

এরই মধ্যে শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় স্থানীয় তরুণদের দেশি অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে। আবাসন সংকট থাকায় অধিকাংশ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নবিনবাগ এবং গোবরাতে অবস্থান করতে হয়। রাস্তায় চলাচল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই সময় ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে বখাটেরা। এতদিন বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ছাত্রীরা। এরই মধ্যে কেউ কেউ মেস ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে উঠেছেন।

একাধিক ছাত্রী জানিয়েছেন, গত দুই দিন ধরে বাসার বাইরে বের হওয়া তো দূরের কথা বারান্দায় যেতেও ভয় পাচ্ছেন। সবসময় বাসার চারপাশে স্থানীয় বখাটেরা ঘুরে বেড়ায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের দেখলেই উত্ত্যক্ত করে। এমনকি স্থানীয় নারীদের রাস্তায় চলাচল করতে দেখলেও বাজে মন্তব্য করে তারা।

আরও পড়ুন: ধর্ষকের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি
 
মেস ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান নেওয়া ফাতিমাতুজ জোহরা বলেন, ‘আমাদের বাসার কেয়ারটেকারের কাছ থেকে বাসার চাবি নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল স্থানীয় কয়েকজন বখাটে। আমরা রাস্তায় বের হলেই কটূক্তি করে। নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে তারা। প্রতিবাদ করতে গেলেই ঘটে বিপত্তি। বাধ্য হয়ে বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে হলে উঠেছি।’

প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অবস্থান

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বশেমুরবিপ্রবির প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, ‘যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেসে সিট সংকট রয়েছে সেহেতু ছাত্রীদের বিভিন্ন মেসে থাকতে হয়। কয়েকজন ছাত্রী উত্তক্ত্যের অভিযোগ করেছেন। তাদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি আমরা।’

আরও পড়ুন: তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে উত্তাল বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রথীন্দ্রনাথ বাপ্পি বলেন, শিক্ষার্থীরা গত দুই দিন ধরে চার দফা দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে একটা দাবি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আজ ঢাকায় র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনের পর  নবিনবাগ এলাকায় স্থানীয় যুবকরা অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে। এ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি একটাই, শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। না হয় এখানে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হবে।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে এ বিষয়ে এখনও কোনও অভিযোগ আসেনি। ওই এলাকার পরিস্থিতি কেমন, আপনারা ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাদের জানান। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন। সেখানে কেউ যদি অস্ত্রের মহড়া দিয়ে থাকে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: বিচার দাবিতে বশেমুরবিপ্রবিতে মশাল মিছিল

গত বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ২৫ মিনিটে গোপালগঞ্জ জেলা স্কুলের নির্মাণাধীন ভবনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার বন্ধুর সঙ্গে গোপালগঞ্জ সদরের নবীনবাগ হেলিপ্যাডের সামনে থেকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাদের অটোতে তুলে নেওয়া হয়। পরে ৭/৮ জন মিলে তাদের গোপালগঞ্জ জেলা স্কুলের নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যায়। সেখানে বন্ধুকে মারধর করে ওই শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। 

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মিছিল

এ ঘটনায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরই মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তবে ধর্ষণের বিচার চেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রথমে সদর থানা এবং পরে মহাসড়ক অবরোধ করেন। সেসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়রা হামলা চালিয়ে ভাইস চ্যান্সেলরসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আহত করে। টানা তৃতীয় দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: ধর্ষক-হামলাকারীদের বিচার দাবিতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

এদিকে, শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণকারীরা আগে থেকেই চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মাদকসহ একাধিক মামলাও রয়েছে।