আইএস নেই, শাখা বলে জাহির করছে অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী

আইএস

বড় বিপদের করাল গ্রাস হয়তো সরাসরি নেই। কিন্তু ছোট ছোট ভয়গুলোই যদি সেই ভয়ঙ্কর কালো থাবার ছায়া হয়ে ওঠে! তা হলে?

আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের মতো জঙ্গি সংগঠন পদ্মাপারে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের স্বঘোষিত শাখা হিসেবে কাজ করছে বলে আশঙ্কা ভারতীয় গোয়েন্দাদের একাংশের। বাংলাদেশে পর পর মুক্তমনা চিন্তাবিদদের কয়েকজন নিহত হয়েছেন। বেশির ভাগ ঘটনাতেই আইএস নিজেদের দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দারা নিজস্ব অনুসন্ধান থেকে জেনেছেন,ওই সব আসলে আনসারুল্লাহ আর জেএমবিরই কাজ। বাংলাদেশ সরকার একাধিকবার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সে দেশে আইএসের কোনও অস্তিত্ব নেই।

কিন্তু পড়শি দেশ বলেই বাংলাদেশে মুক্তমনাদের ওইসব প্রাণহানির ঘটনা ও তার দায় স্বীকার করে আইএসের বিবৃতি চিন্তায় ফেলেছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের। তাদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার মতো রাজ্যের মানুষের একটা বড় অংশের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ও ভাষা অনেকটাই এক। কাজেই, আইএস সে দেশে প্রভাব বিস্তার করতে পারলে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামেও সহজেই পারবে।

আরও পড়ুন: ভয় ভয়ে জিডিও করছেন না ভুক্তভোগীরা

বিশেষ করে হুগলির ধনেখালির আশিক আহমেদ নামে এক পলিটেক‌নিক ছাত্রকে যেখানে মার্চ মাসেই আইএসের ভারতীয় শাখা সংগঠনের সদস্য সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার বছর দেড়েক আগে কলকাতা বিমানবন্দর লাগোয়া কৈখালি এলাকার বাসিন্দা মেহেদি মসরুর বিশ্বাস ভারতের কর্নাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার হন আইএসের সব চেয়ে জনপ্রিয় ট্যুইটার হ্যান্ডল তৈরি ও সেটি চালানোর অভিযোগে।

তবে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এক দিকে বাংলাদেশে পর পর কয়েকটি প্রাণহানি ও দায় স্বীকার করে আইএসের বিবৃতি ও অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের আইএসের অস্তিত্ত্ব অস্বীকার করার ঘটনায় প্রথমে তাদের মনে হয়েছিল, এসব আইএস মতাদর্শে অনুপ্রাণিত ‘লোন উলফ অ্যাটাক’ নয় তো! দু’বছর ধরেই আইএস বলে আসছে, পৃথিবীর যে কো‌নও দেশে তাদের নীতিতে বিশ্বাসী কোনও মুসলমান যদি মনে করেন, তিনি তার মতো করে চিহ্নিত করে কোনও শত্রুকে খতম করতেই পারেন এবং তার জন্য একটি ছুরিই যথেষ্ট। এমনটা করলে ইরাক কিংবা সিরিয়া থেকে অনেক অনেক দূর দেশের কোনও বাসিন্দাও আইএস-কেই আসলে শক্তিশালী করবেন। এবং এই লোন উলফ অ্যাটাক-এর জন্য কোনও গোপন বৈঠক, বিরাট কিছু পরিকল্পনা এসবের দরকার নেই।

আরও পড়ুন:  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিপ্রধানমন্ত্রীকে জন কেরির ফোন

এনআইএ-র ওই কর্মকর্তার কথায়,‘‘গত ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ড ও তার আগে আরও যে কয়েকটি হত্যার ঘটনায় আইএস নিজেদের কাজ বলে জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে, সেগুলো সুপরিকল্পিত এবং তাতে বেশ কয়েকজন জড়িত। এগুলোর প্রায় কোনটাই লোন উলফ অ্যাটাক নয়। আবার বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ত্ব না থাকার কথাও জানিয়েছে সে দেশের সরকার।’’

প্রসঙ্গত, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর থেকে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সঙ্গে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা দু’দেশের নিরাপত্তার  স্বার্থে বহু তথ্য আদান-প্রদান করেছেন। জঙ্গি দমনের ব্যাপারে দু’দেশই পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বিশ্বাসের অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করছে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে জেএমবির একটি আস্তানায় বিস্ফোরণের সূত্রে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ঝাড়খণ্ডে জেএমবির নেটওয়ার্কের খবর জানা যায়। জেএমবি বাংলাদেশেরই জঙ্গি সংগঠন।

আরও পড়ুন: ্‌ এটা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈতনীতি!

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-র বক্তব্য, বাংলাদেশে কোনঠাসা জেএমবি এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিজেরা ঘটনা ঘটিয়ে আইএসের নাম করে বিবৃতি দিচ্ছে। যাতে ভয় বা বাহবা নিজের দেশে আদায় করা যায় এবং ইরাক ও সিরিয়ায় ঘাঁটি গেড়ে থাকা আইএসের কাছ থেকে কোনও ধরনের সাহায্য পাওয়া যায়। আইএস এই ধরনের বিবৃতির কোনও বিরোধিতা করছে না, কারণ তাদের নাম যত বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে, ততই তাদের লাভ। বিশেষ করে আইএস যেখানে ইতোমধ্যেই অবিলম্বে খিলাফত প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা ও নির্বিচারে নৃশংস হত্যার নিরিখে আল কায়েদার তুলনায় খুব কম সময়েই প্রভাব বিস্তার করেছে। দুনিয়ার জেহাদি জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিজেদের ছাতার তলায় এনে আইএস চায়, সেগুলো তাদের শাখা সংগঠন হিসেবে কাজ করুক। আর বাংলাদেশের পর পর ওই সব ঘটনায় ভারতের ভয়টা সেখানেই বলে মনে হচ্ছে আইবি’র।

এনআইএ-র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘খাগড়াগড়ের পর জেএমবির নথিপত্র ঘেঁটে প্রথমে আমাদের মনে হয়েছিল, ওরা আল কায়েদা থেকে অনুপ্রাণিত। পরে আরও কাগজপত্র ও কিছু প্রমাণ হাতে আসা এবং জেএমবির ধৃত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা বুঝতে পারি, আইএস-কেও ওরা আদর্শ মনে করে।’’

এপিএইচ/