১৬০ বছর আগে ১৮৫৭ সালে নারী শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার আদায়ে যে সংগ্রাম শুরু করেছিল কালের ধারাবাহিকতায় সেই আন্দোলন সারা বিশ্বে নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। সমাজে নারী-পুরুষের সম অধিকার আদায়ের সেই সংগ্রাম এখনও অব্যাহত। এখনও সর্বস্তরে নিজেদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন নারীরা।
এ সংগ্রামের মধ্য দিয়েই নারীরা রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, ক্রীড়া, বিনোদনসহ সব ক্ষেত্রেই নিজের স্থান প্রতিষ্ঠা করেছেন। নারীরা রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বোচ্চ পদে জায়গা করে নিয়েছেন। তবে পৃথিবীর পুরুষতান্ত্রিক নিয়মের যাঁতাকলে এই অর্জন সামগ্রিকভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে না। অর্জনের খাতায় বহুরৈখিক সাফল্য থাকলেও বঞ্চনার খেরোখাতাও লিপিবদ্ধ হচ্ছে আরও বেশি পরিমাণে। এ কারণেই সচেতন নারী-পুরুষ মনে করছেন, অবস্থান শীর্ষে হলেও মর্যাদাগত ও প্রভাবগত বিষয়ে নারী তার ইচ্ছাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এর পেছনে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবই দায়ী। ক্ষেত্র বিশেষে ধর্মীয় অনুশাসনও বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। এজন্য পরিবর্তন আসা দরকার দৃষ্টিভঙ্গি, পরিবার ও চিন্তার জায়গায়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ফাতিমা আক্তার মুন্নি। তিনি বলেন, দু-তিনজন সফল নারীকে উদাহরণ হিসেবে টেনে পুরো নারী সমাজের চিত্র পাওয়া যায় না। এ দেশে নারীরা যতটুকু এগিয়েছে এর চেয়ে আরও বেশি এগোনো উচিত ছিল। আমাদের দেশে নারীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা সংকোচ বোধ। এজন্য যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নারী পিছিয়ে যায়। সামনে এগোতে হলে সংকোচ ঝেড়ে ফেলতে হবে।
লেখক ও কবি আবু মুস্তাফিজ হাসানের ভাষ্য, ‘যে নারী শীর্ষপদে গেছেন তার অবস্থার সার্বিক পরিবর্তন তো অবশ্যই হয়েছে। যে পুরুষ শীর্ষ পদে গেছেন তারও হয়েছে। কিন্তু যে নারী বা পুরুষ উঁচুতে পৌঁছায়নি তার কপালে তো খারাপই থাকে। বিশেষ করে নারীদের পরিস্থিতি। এখনও আমরা নারীকে সহকর্মী ভাবতে শিখিনি। তার মেধা ও যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দিতে চায় না। সে তার নিজ যোগ্যতা আর মেধা দিয়েই ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পৌঁছেছে। আমাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালে নারীর অগ্রযাত্রা আরও বেশি স্বস্তির হবে।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গল্পকার মুস্তাইন সুজাত বলেন, নারীর সার্বিক উন্নতি এখনও ঘটেনি। স্বাধীনভাবে কাজ করার আবহ এখনও পূর্ণতা পায়নি। শিক্ষায় এবং নেতৃত্বেও নারীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হলেও কুসংস্কার, ধর্মীয় অনুশাসনের নানা রকম বাধার কারণে উন্মেষ পুরোপুরি ঘটেনি।
তরুণ লেখক ও সাংবাদিক সন্দীপন বসু বলছেন, ‘সাবির্কভাবে নারীর উন্নতি ঘটেনি। কারণ আমরা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি। নারী হিসেবেও তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে পারেনি। সফলতা এখন পুরুষবাচক শব্দ। তাই সফলতার নিরিখে নারী এখন নারী নন, পুরুষ হতে চান। নারী-পুরুষ একে অন্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, বরং একে অন্যের পরিপূরক।’
চিত্রনায়িকা অধরা খান বলেন, নারীর সার্বিক উন্নতি সাধিত হয়নি। আমাদের দেশে শীর্ষপদে নারীদের অধিকার এই মুহূর্তে অনেক বেশি তার মানে এই না যে অল্প সময়ে সর্বস্তরের নারীদের সার্বিক উন্নতি পরিবর্তন সম্ভব। তবে আমরা আগে থেকে অনেক এগিয়েছি।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, ‘নানা প্রাতিষ্ঠানের শীর্ষপদে এখন অনেক নারী রয়েছে। তবে নারীর সার্বিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য এই গুটি কয়েক নারীর স্বর কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে নারীর পক্ষে কথা বলার সামষ্টিক কণ্ঠস্বর বৃদ্ধিই একমাত্র নারীর সার্বিক পরিস্থিতির অগ্রগতি সাধন করবে।’
গল্পকার মেহেরুন রুমা বলেন, গুটিকতক শীর্ষপদে প্রতিষ্ঠিত নারীদের দিয়ে সার্বিক নারীর অবস্থান বিচার করা যায় না। নারীর সার্বিক পরিবর্তন এখনো বহুদূরে। শীর্ষপদে প্রতিষ্ঠিত হলেও নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ক্ষমতায়নের জায়গাটা এখনও অপ্রতিষ্ঠিত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কথাসাহিত্যিক নাহার মনিকা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নারীর সার্বিক পরিবর্তনে কয়েকটি পর্যায় আছে। পড়ালেখা, স্বাবলম্বী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজ ও মানসিকতা পরিবর্তন খুব দরকারি। সেখানে সরকার ও রাষ্ট্র কাঠামোর শক্তি থাকা জরুরি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক একটা সিস্টেম, যেটি পরিচালিত নারী-পুরুষের সমন্বিত প্রয়াসেই। যে সিস্টেম উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এটিকে জিইয়ে রাখা হয়েছে। এর পেছনে রাজনৈতিক কারণটিই প্রধান। নারী তার শিক্ষা-দীক্ষা, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এই বাধাটিকে বিজয় করতে হবে। সমস্যার জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা চালাতে হবে।’
চিন্তাবিদ যতীন সরকার মনে করেন, রাজনৈতিক ও প্রধানত ধর্মীয় কারণেই নারীর অবস্থান ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রকৃত অর্থে নিশ্চিত করা যায় না বা অতীতে করা যায়নি। নারী পৃথিবীর স্থানে-স্থানে শীর্ষপদে অবস্থান করলেও-বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয়নেত্রী, সংসদের বাইরে প্রধাননেত্রী বা অন্যান্য দলে সমধিক নারীনেত্রী থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। এক ধরনের ভোগ্যপণ্য হিসেবেও এখনও ব্যবহৃত হচ্ছেন নারীরা। ফলে, অবস্থান শীর্ষ দিয়েই বিচার্য নয়, ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হল কি না। তিনি বলেন, এ কারণে রাষ্ট্রের নিয়মকানুন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাতৃবান্ধব করতে হবে, নারীবান্ধব করতে হবে।
/এসটিএস/এসটি/টিএন/
আরও পড়ুন:
আরও পড়ুন:
জীবনযুদ্ধে হার না মানা ভ্যানচালক জায়দা বেগম
বখাটের বিরুদ্ধে নিজেই মামলা করলেন বিচারক
শাহজাদপুরে প্যানেল মেয়রের ওপর পৌরসভার দায়িত্ব অর্পণ
নারী দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন
ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৩, সিএসইতে বেড়েছে ৬২ পয়েন্ট
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ
কী আছে ট্রাম্পের নতুন ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞায়’
আবারও আইনি লড়াইয়ের মুখে ট্রাম্পের ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’
ট্রাম্পের নতুন ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’য় সোমালিয়া ও সুদানের নিন্দা
ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ
নারী দিবসে বাংলা ট্রিবিউনের নেতৃত্বে আবারও নারীরা
পলিসি বাস্তবায়ন: নারীর অবস্থান হতাশাজনক