কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিলেন প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘মানুষকে বাঁচানোর জন্য ভবিষ্যতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’ বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭১তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

বিসিএস কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ এ কথা মাথায় রেখেই কাজ করবেন। সে জনগণ হতদরিদ্র হোক, কৃষক বা শ্রমিক হোক, সেও কিন্তু এ দেশের মালিক। সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে এ কথাই বলা আছে যে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। সে কথা মাথায় রেখেই আপনারা তাদের সেবা দেবেন। দেশের মানুষের জন্যই আপনাদের কাজ করতে হবে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘মহান মুক্তি-সংগ্রামের এবং মুক্তিযুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। তাই বাংলাদেশে ধর্ম-লিঙ্গ-ধনী-দরিদ্র কোনও ভেদাভেদ নয়। মানুষ মানুষই। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখে তাদের সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে তাদের সমান অধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে। সেই মানসিকতা নিয়েই আপনারা জনগণের সেবা করবেন, সেটাই আমি চাই। কারণ, কেউ তো ইচ্ছা করে দরিদ্র হয়ে জন্মায় না, আর দরিদ্র হয়ে জন্মালেই তাকে অপবাদ দিতে পারেন না। বরং তাকে সাহায্য করা দরকার। যেন উঠে দাঁড়াতে পারে, সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারে।’

সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে জাতির পিতার দেওয়া ভাষণের কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় এই গরিব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমি গাড়ি চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন। ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক।’ বাংলাদেশের জনগণই বাংলাদেশের মালিক।”

তিনি বলেন, ‘কর্মজীবনে বৃহত্তর পরিসরে ফিরে গিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান যথার্থভাবে প্রয়োগ করবেন। জনসেবায় দেশপ্রেমিক মনোভাব, সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন ও সমুন্নত রাখতে উদ্যোগী হবেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে দেশকে গড়ে তুলবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস নামে একটি ভাইরাস আজ সারা বিশ্বটাকেই তোলপাড় করে দিয়েছে। সারা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুতে একটা বাধা আসছে। কিন্তু তারপরেও আমাদের প্রচেষ্টা রয়ে গেছে। আমরা বাজেট প্রণয়ন করেছি। আমরা পরিকল্পনাগুলো হাতে নিচ্ছি। হয়তো কিছু দিনের জন্য সবকিছু থমকে গিয়েছিল। তার পরে আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছি। কারণ, আমাদের লক্ষ্যটা হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চাই।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, ‘আমি জানি আমার এখন যে বয়স তাতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করার মতো বা বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আজ যারা নবীন অফিসার দায়িত্ব নিয়ে কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে কাজে যাবেন, আপনাদের ওপরই দায়িত্ব পড়বে। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হচ্ছে আজকের নতুন প্রজন্ম। যারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে যোগ দেবেন। এ কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে, সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। সব সময় একটা কথা মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি, আমরা বাঙালি, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলবো। ১৯৭৫ সালে সে সম্মান আমরা হারিয়েছিলাম, ২০০৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত নিরলস পরিশ্রম করে সে সম্মান আবার আমরা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে যেন আর কখনও এ সম্মান নষ্ট না হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন-

আরও ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আসছে?

ঢাকা বারুদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

লকডাউনে কী করবেন, কী করবেন না

লকডাউন বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার

নির্দেশনা পালনে কঠোর হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী

সরকার বাধ্য হয়ে লকডাউন দিয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী