১৮ জুন সারাদেশে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)আগামী ১৮ জুন সারাদেশে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। তবে ওই দিন সব ধরনের জরুরি চিকিৎসা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠনটি। এছাড়াও কালোব্যাজ ধারণ এবং চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা চেয়ে মামলা করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে তারা। রবিবার (২৮ মে) সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের এক জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী।
বিএমএ মহাসচিব জানান, বিএমএ’র কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৮ জুন সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা, অর্থাৎ ১৯ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখবেন চিকিৎসকরা। আগামী মঙ্গলবার (৩০ মে) উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
সভার অন্যান্য সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজকের (রবিবার) সভায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভাঙচুর, চিকিৎসকদের মারধর ও প্রথিতযশা একজন চিকিৎসকসহ নয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবহেলায় রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মিথ্যা অভিযোগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রোগী মৃত্যুর কারণকে চিকিৎসকের অবহেলায় ঘটেছে বলে ঢালাও অভিযোগ, চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও চিকিৎসকের ওপর হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পরে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ আগামী ২৯ মে থেকে ঈদুল ফিতরের ছুটির আগ দিন পর্যন্ত সারাদেশে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে কালো ব্যাজ ধারণ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। একই দিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বিএমএ নেতারা আলোচনা করবেন।’
ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ৪ জুন চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা চেয়ে মামলা করার সিদ্ধান্তও নিয়েছি আমরা। পরের দিন বিএমএ’র কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সঙ্গে সিনিয়র ও তরুণ চিকিৎসকের মতবিনিময় হবে। ৬ জুন সারাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে চিকিৎসকরা বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন। ৭ জুন উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএমএ’র কেন্দ্রীয় নেতারা সাক্ষাৎ করবেন এবং ১১ জুন দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সারাদেশে প্রত্যেক চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের সামনে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন। আগামী ৩ জুলাই বিএমএ অডিটোরিয়ামে বিএমএ’র সব শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে বর্ধিত সভা করবে বিএমএ।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ মে রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফিয়া জাহিন চৈতির মৃত্যুর অভিযোগ এনে সেন্ট্রাল হাসপাতাল ভাঙচুর করে ঢাবি শিক্ষার্থীরা। পরদিন ১৮ মে সন্ধ্যার দিকে ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিক্যাল অনুষদের ডিন ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহকে এক নম্বর আসামি করে নয় জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। এর পরপরই সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. এম এ কাশেম ও ডা. সাজিদ হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আদালত তাদের সবার জামিন মঞ্জুর করেন

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভাঙচুর, চিকিৎসকদের মারধর ও সিনিয়র চিকিৎকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে এর আগে গত ২৩ মে সারাদেশে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখার কর্মসূচি দেয় বিএমএ। এছাড়া, গত ২১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত চিকিৎসকরা কর্মক্ষেত্রে কালো ব্যাজ ধারণ করেন। দুই দফা মানববন্ধনও করে বিএমএ। এর মধ্যে গত ২৪ মে সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও ঢাবি কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে সম্মত হয়। তবে এই সমঝোতার বিষয়টি বিএমএকে অবহিত না করায় ক্ষোভ জানায় বিএমএ। ২৫ মে বিএমএ’র এক মানববন্ধনে সংগঠনটির মহাসচিব বলেন, কারও সঙ্গে আলোচনা না করে সমঝোতা করার মাধ্যমে চিকিৎসকদের সঙ্গে বেঈমানি করেছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল
/জেএ/টিআর/