তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, হলি আর্টিজানে হামলার পর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জঙ্গিদের পুরোপুরি নির্মূল করতে না পারলেও তাদের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছেন তারা। দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবে জঙ্গিরাও বার বার কৌশল পরিবর্তন করে পাল্টা হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে। পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, এই সময়ে প্রায় দুই ডজনেরও বেশি হামলা করেছে জঙ্গিরা। এর কোনোটি ছিল এককভাবে, কোথাও সম্মিলিতভাবে।
পুলিশ সদর দফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের মধ্যে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ৮৭ জন। তবে এ অভিযান জোরদার হয় ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর। হলি আর্টিজান, কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সিলেটসহ জঙ্গিবিরোধী বিভিন্ন অভিযানে অন্তত ৪০টি জঙ্গি আস্তানায় বিগত ১০ মাসে নারীসহ মারা গেছে ৫৪ জন। বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে আরও ২২ জঙ্গি। অভিযানসহ বিভিন্ন ঘটনায় জঙ্গিদের আসামি করে এ পর্যন্ত ৬৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে সারাদেশে। এর মধ্যে তিনটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ১৮ মামলার। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে একটিতে। তদন্ত চলছে আরও ৪০টির। ৫৭টি মামলার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। তিনটি ঘটনার রহস্য পুলিশ এখনও উদঘাটন করতে পারেনি।
জিম্মি উদ্ধার অভিযানে পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে নিহত হন হলি আর্টিজানের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। হলি আর্টিজান ভেতর থেকে আটক আরেক কর্মচারী জাকির হোসেন শাওন ঘটনার কয়েকদিন পর হাসপাতালে মারা যান। হলি আর্টিজানে হামলা ও জঙ্গিদের সঙ্গে এই দুই জনের জড়িত থাকার কোনও তথ্য এখনও পাননি তদন্ত কর্মকর্তারা।
জঙ্গিবাদ মনিটরিংয়ে পুলিশ সদর দফতরের বিশেষায়িত সেল এলআইসি শাখার প্রধান ও এআইজি (গোপনীয়) মনিরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একটি শিক্ষা ছিল। হলি আর্টিজান ছাড়া আরও বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। কিন্তু হলি আর্টিজানের হামলা থেকে শিক্ষা নিয়ে পুলিশ জঙ্গি দমনে অনেকগুলো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। যার কারণে শোলাকিয়া ছাড়া আর কোথাও ওইভাবে জঙ্গিরা হামলা করতে পারেনি।’
সর্বশেষ গত বুধবার (২৮ জুন) দুপুরে সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘হলি আর্টিজানের ঘটনা ছিল টার্নিং পয়েন্ট। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, জঙ্গিরা কী চায়। সব বিষয় খতিয়ে দেখতে গিয়ে চার্জশিট দিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।’ শিগগিরই এ ঘটনায় নির্ভুল ও নিখুঁত চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
/এমএনএইচ/
আরও পড়ুন-
হলি আর্টিজান এখন
অবিন্তা নেই, বেঁচে আছে তার স্বপ্ন
তুমি কোথায়, গুলশানে জঙ্গি হামলা!
দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন তারা
‘হয় আমি মরবো, না হয় ওদের মারবো’
অপারেশনের শুরুতে উত্তেজনায় কাঁপছিলাম
নিহত শাওনের মায়ের বিলাপে ভারি গুলশান
হলি আর্টিজান কেন বেছে নিয়েছিল জঙ্গিরা?
এসি রবিউলের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ থেকে ‘সান ডেভিল’
শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন এডিসি আব্দুল আহাদ
গুলি ও বোমার আঘাতেই মৃত্যু হয়েছিল হলি আর্টিজানের জঙ্গিদের
গুলশান হামলায় নিহতদের স্মরণে অনুষ্ঠান নিয়ে দূতাবাসগুলোয় সতর্কতা
হলি আর্টিজানের পলাতক জঙ্গিদের এক মাসের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে: মনিরুল
হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনা রাজশাহীতে, কৌশল নির্ধারণ গাইবান্ধায়, চূড়ান্ত অপারেশন প্ল্যান ঢাকায়