বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা.সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বুধবার রাতের মধ্যে সবার রক্তের গ্রুপিং করা হবে, কাল থেকে সবার রক্ত লাগবে।’
বার্ন ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনকে রাত দশটায় জানান, ভর্তি হওয়া সব রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক, কারও সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে সবাইকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে ফুল অ্যাসেসমেন্ট করা হবে, ইমার্জেন্সি অপারেশন যাদের লাগবে সেগুলো করা হবে।’
বুধবার সন্ধ্যায় রিসাসিটেশন (ফ্লুইড দিয়ে পানিশূণ্যতা পূরণ) করা হয়েছে। কাল থেকে প্রতিটি রোগীর জন্য রক্ত দরকার হবে মন্তব্য করে ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, ‘প্রতিটি রোগীর সাদা রক্ত (ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজম) দরকার, সবার লাগবে। সবাই যেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে যোগাযোগ করেন। ওখান থেকেই সবার রক্ত সংগ্রহ করা হবে। ইতোমধ্যেই সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দীন।’
এদিকে, সন্ধ্যায় কাউকে আইসিইউতে দেওয়া হয়েছে কীনা জানতে চাইলে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ঝড় সামলিয়েছি।’ একই কথা বলেন ডা. নাসির উদ্দীনও। তিনি বলেন, ‘কাল শর্ট আউট করে আইসিইউতে দেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চুনকুটিয়া হিজলতলা এলাকার প্রাইম অনটাইম প্লাস্টিক কারখানায় এই আগুন লাগে।
রাত সাড়ে সাতটায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পাঁচ তলায় অবস্থিত মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে (পেইং) গিয়ে দেখা যায়, পুরো শরীর পুড়ে যাওয়া স্বামী আলমকে ধরে বিছানা থেকে তুলে বসিয়েছেন রুমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আলম চোখেও দেখতে পাচ্ছেন না।’
পাশে দাঁড়ানো আলমের বড় বোন রোকেয়া বেগম বলেন, ‘তাদের বাবা-মা নেই, চার ভাই তিন বোনের এ পরিবারটি অনেক কষ্টে একে অন্যকে আগলে ধরে বড় হয়েছেন। তিনি সবার বড়। কারখানাতে তার ছোট দুই ভাই কাজ করতেন। দুই ভাই-ই গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়ে এখানে ভর্তি হয়েছেন।’
রোকেয়া বেগম বলেন, ‘বড় বোন হয়ে ছোট ভাইদের এ অবস্থা দেখতে হচ্ছে।’
নিজেকে সামলে নিয়ে রোকেয়া বেগম বলেন, ‘‘চালু হওয়ার পর থেকে এ কারখানায় প্রতিবছর আগুন লাগে, গত বছরও আগুন লেগেছিল। কিন্তু সেবার ভেতরে মানুষ কম থাকার কারণে ‘জানের ক্ষতি’ হইছিল কম।’’
ক্ষোভের সঙ্গে রোকেয়া বেগম বলেন, ‘এলাকার প্রভাবশালী নজরুল এই কারখানার মালিক। প্রত্যেকবার কারখানা পোড়ার পরও সে কেমনে-কেমনে যেন আবার কারখানা শুরু করে, তারতো দরকার ব্যবসা, মানুষের জানের কথা সে চিন্তা করবো কী। এইবারও হয়তো কেউ ১০ হাজার অথবা ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিবো, কিন্তু জান গেলে জানের ক্ষতিপূরণ কেমনে দিবো।’
আরেক গুরুতর আহত সাজিদ আহমেদের ছোট ভাই শোয়েব আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আহত সাজিদ ওই কারখানাতে ফ্লোর সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেন।’ কীভাবে আগুন লেগেছে জানতে চাইলে শোয়েব বলেন, ‘যখন আগুন লাগে তখন তার ভাই মাত্র কারখানার ভেতরে ঢুকেছিলেন, মেইন গেটের কাছাকাছি ছিলেন বলে সাজিদ তাকে জানিয়েছেন। যার কারণে তার অবস্থা তুলনামূলকভাবে অন্যদের চেয়ে ভালো, তারপরও সাজিদের দুই পা, দুই হাত পুড়ে গেছে।’
আরও খবর...
আগুন লাগা কারখানাটির অনুমোদন ছিল না: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিহত ১
কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানায় আগুন, আহত ৩০
প্লাস্টিক কারখানায় দগ্ধ ৩২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক
গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে আগুনের সূত্রপাত