দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার তথ্য আগেই পেয়েছিলেন পি কে হালদার

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশের চিঠি ইমিগ্রেশন বিভাগে পৌঁছানোর আগেই তথ্য পেয়েছিলেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার। মঙ্গলবার (২ মার্চ) সংশ্লিষ্ট কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, পি কে হালদারের দেশত্যাগের বিষয়ে হাইকোর্টকে তথ্য জানিয়েছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। তারা জানিয়েছে, পি কে হালদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে ইমিগ্রেশন বিভাগকে চিঠি দেয়। ওই চিঠিটি একইদিন বিকাল ৫টা ৪৭ মিনিটে পিকে হালদারের নামসহ ইমিগ্রেশন বিভাগের ‘স্টপ তালিকা’র সিস্টেমে নথিভুক্ত করা হয়। তবে ইমিগ্রেশন বিভাগের সিস্টেম আপডেটের ৫১ মিনিট আগে একইদিন বিকাল ৫টা ৩৮ মিনিটে দেশত্যাগ করেন পি কে হালদার। সেদিন বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে চলে যান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে দুদকের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞার তথ্য আগেই পেয়েছে পি কে হালদার? এদিকে বাংলাদেশ ছাড়াও ক্যারিবীয় রাষ্ট্র গ্রানাডার পাসপোর্ট রয়েছে পি কে হালদারের কাছে। তাই হাইকোর্ট এ বিষয়ে আগামী ১৫ মার্চ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন।’ 

এর আগে পি কে হালদারের ৮৩ সহযোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ আছে বলে হাইকোর্টকে জানান বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। হাইকোর্টে দাখিল করা বিএফআইইউর প্রতিবেদনে পি কে হালদার ও তার ৮৩ সহযোগীর ৪৩টি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দিয়ে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের বিস্তারিত তথ্যও উঠে এসেছে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে ফ্রিজ অবস্থায় রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চে পি কে হালদারের দেশে ফেরত আসতে কোনোরকম গ্রেফতার না করার নির্দেশনা চেয়ে একটি আবেদন করে তার প্রতিষ্ঠান আইএলএফএসএল। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত জানিয়েছিলেন, পি কে হালদার কবে, কখন, কীভাবে দেশে ফিরতে চান তা আইএলএফএসএল লিখিতভাবে জানালে সে বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

পরবর্তীতে পিকে হালদারের দেশে ফেরার বিষয়ে গত ২০ অক্টোবর হাইকোর্টকে জানায়। পিকে হালদারের প্রতিষ্ঠান আইএলএফএসএল’র পক্ষ থেকে হাইকোর্টকে জানানো হয়, ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা আসার জন্য টিকিট কেটেছেন। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।

সার্বিক দিক বিবেচনার পর পিকে হালদারকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পিকে হালদার দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশের আইজি এবং ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি কারাগারে থাকাবস্থায় পিকে হালদার যেন অর্থ পরিশোধের সুযোগ পান সে বিষয়ে সুযোগ দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পিকে হালদারের দেশে ফেরার বিষয়ে আইএলএফএসএলের করা আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। তবে পরে আর তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দেশে ফেরেননি।

আরও পড়ুন-

পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের ৭০ একর জমি ক্রোকের আদেশ

পি কে হালদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে জানতে চান হাইকোর্ট

পি কে হালদারের ফ্ল্যাট ও জমি ক্রোকের নির্দেশ

পি কে হালদার কাণ্ডে যে ৮৩ জনকে নিয়ে তদন্ত করছে দুদক

পি কে হালদারের ৬২ সহযোগীর হাজার কোটি টাকা জব্দ

পি কে হালদারকে পালাতে সহায়তা করা কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

কীভাবে ফিরিয়ে আনা হবে পি কে হালদারকে?