নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অভিন্ন প্রস্তাব দেবে আ.লীগসহ শরিকরা

১৪ দলীয় জোটনির্বাচন কমিশনের সংলাপে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা অভিন্ন প্রস্তাব দেবে। জোটের শরিকদের মধ্যে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। ১৪ দলীয় জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে জোটের প্রস্তাবনা ঠিক করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ অক্টোবর দেশে ফেরার পর শরিক দলের সঙ্গে বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হবে। ক্ষমতাসীন জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা সাতটি। এর বাইরে পাঁচটি দলের নিবন্ধন নেই। নিবন্ধিত দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), ন্যাপ (মোজাফফর), তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি-মঞ্জু) ও গণতন্ত্রী পার্টি।

১৪ দলীয় জোট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ অক্টোবর দেশে আসলে জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে কী প্রস্তাব দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত করা হবে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ শুরু হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি বলেন, ‘১৪ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে। এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তবে বৈঠকের তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।’

তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এমএ আউয়াল বলেন, ‘১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম আমাদের জোটের বৈঠকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সেটা ঈদের পরেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন কারণে এ বৈঠক হয়নি। আশা করছি, তিনি জাতিসংঘের অধিবেশন থেকে দেশে ফিরে আসলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’

এদিকে আওয়ামী লীগও নিজস্ব প্রস্তাবনা তৈরির জন্য সংলাপের আগে দলের কার্যনির্বাহী বৈঠক হবে। আগামী ১৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসবে আওয়ামী লীগ। দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘নেত্রী দেশে ফিরে আসলে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দেওয়া হবে নির্বাচনের সঙ্গে সেনাবাহিনীকে যেন সরাসরি যুক্ত করা না হয়। তবে নির্বাচন কমিশন পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেনা মোতায়েন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তা হবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। কোনোভাবেই তাদের নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়ার বিধান যেন না করা হয়।’

প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করাও প্রস্তাব দেওয়া হবে জোটগুলোর পক্ষ থেকে। প্রত্যেক সংসদীয় এলাকায় প্রার্থীদের জনসভার জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, দলটির পক্ষ থেকে প্রস্তাব থাকবে সংবিধান অনুযায়ীই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। এ সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের কাছে চলে যাবে। সব পর্যায়ে রদবদলের দায়িত্বেও থাকবে নির্বাচন কমিশন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার, অভিন্ন পোস্টারের প্রস্তাব দেওয়া, নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট একটি টোকেন মানি সরবরাহের প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে সবকিছু চূড়ান্ত হবে প্রধানমন্ত্রী দেশে আসার পর। এর বাইরে বিএনপি  কমিশনকে কী ধরনের প্রস্তাব দেয় সেটাও পর্যালোচনা করা হবে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে কী ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখনই বলা যাবে, আমরা কোন কোন ইস্যুতে আলোচনা করবো, আর আমাদের কোন কোন নেতা এ বৈঠকে অংশ নেবেন।’

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী আমরা আলোচনা করবো। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকবে। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে আমরা বিভিন্ন প্রস্তাব দেবো।’

১৪ দলীয় জোটের শরিক ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি আমিনা আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখনও সংলাপের আমন্ত্রণ পাইনি। তবে আমাদের দলীয় ফোরামে সংলাপের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে বৈঠক হবে বলে জানতে পেরেছি। সেখানে ১৪ দলের সার্বিক বিষয়সহ আগামী নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।’

গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ড. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দেবো। প্রধানমন্ত্রী ফিরে আসলে আমাদের বৈঠক হবে।’

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাবের প্রসঙ্গে ১৪ দলভুক্ত একটি দলের সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহারের মতো সক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই। আমাদের ইভিএমে অনেক ভুল-ক্রটি রয়েছে। তবে সারাদেশে না করে কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় পরীক্ষামূলক করা যেতে পারে।’

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে এ সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে গত ৩১ জুলাই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসি সংলাপ শুরু করে গত ২৪ আগস্ট। নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৮টির সঙ্গে ইসি সংলাপ শেষ করেছে। আগামী মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা সংলাপ শেষ করবে। এরপর নারী সংগঠন, পর্যবেক্ষণ সংস্থা ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অক্টোবরের মধ্যেই সংলাপ প্রক্রিয়া শেষ করবে নির্বাচন কমিশন।

আরও পড়ুন:
টাকা নিয়ে উধাও দালাল, প্রতারিত হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা
জনবল তিন গুণ করতে চায় ইসি
রাখাইনে হত্যা-ধর্ষণ-উচ্ছেদের বিপুল আলামত পেয়েছে এইচআরডব্লিউ
স্বজনদের লাশ শনাক্তে মিয়ানমারে ফিরতে চায় রোহিঙ্গা হিন্দুরা
রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবে সায় নেই সরকারের