X
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
২৭ বৈশাখ ১৪৩১
পরাজয় ঢাকতে অভিযোগ তুলছে বিএনপি

নির্বাচনে অংশ নিতে জাপার ওপর চাপ ছিল: জি এম কাদের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:৫২আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:৫২

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য জাতীয় পার্টির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ ছিল বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণ, বিএনপির আন্দোলন ও অভিযোগের বিষয়ে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে জিএম কাদের উল্লেখ করেন, দেশে তার ‘ওয়ান পার্টি রুল’ চলছে। এতে করে রাজনৈতিক শূন্যতা ও চরমপন্থার সৃষ্টি হতে পারে। জিএম কাদের তার বক্তব্যে বিগত নির্বাচনের বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের প্রতি প্রশ্ন করেন, ‘পঁচা, মরা ও আবর্জনা নিয়ে বিরোধীদল তৈরি করতে চেষ্টা করছে। আর আওয়ামী লীগের গৃহপালিত মিত্রদের কী অবস্থা?’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদের বলেন, ‘দ্বাদশ নির্বাচনে যাবার জন্য বিভিন্ন চাপ এসেছিল। ১৭ ডিসেম্বর (২০২৩) আমি নির্বাচন থেকে সরে আসার সব প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তারপর চাপ আসলো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ চাপের কথা আমি বিস্তারিত বলবো না আপনারা বুঝে নেবেন। পরোক্ষ চাপ হলো— যদি আমি নির্বাচনে না যাই, তাহলেও নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যাওয়া হবে। আমার এবং আমার সঙ্গে যারা থাকবেন তাদের নেতৃত্বে নয়,  অন্যদের দিয়ে নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এবং তাতে বুঝলাম, জাতীয় পার্টি গৃহপালিত দল হিসেবে নির্বাচন করে রাজনৈতিক মাঠ থেকে হারিয়ে যাবে। আমরা রাজনৈতিক মঞ্চ হারাবো তাতে ভবিষ্যতে আমরা দেশ ও জাতির জন্য কিছু করতে পারবো না।’

দলের বর্ধিত সভা শেষে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জিএম কাদের এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কারণ দলীয় নেতাকর্মীদের সামনে ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন,  ‘আমরা বলেছিলাম, আমাদের নিশ্চিত করুন নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষ। প্রশাসন দলীয় কর্মীদের মতো আচরণ করবে না। তারা কথা দিলেন তারা সেটা করবেন। এটা করতে গিয়ে তারা আমার স্ত্রীর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সরিয়ে নিয়ে বললেন, বাকিগুলো প্রসেসে আছে।  বাইরে প্রচার করলেন, আমি স্ত্রীর মনোনয়নের জন্য দলকে বিক্রি করে নির্বাচনে এসেছি।’

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা না গেলেও নির্বাচন হতো, জাতীয় পার্টি সেখানে যেত। সরকারের সেরকম প্রস্তুতি নেওয়া ছিল।’

তিন পররাষ্ট্র শক্তি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে সহযোগিতা করেছে

জি এম কাদের বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য জীবনমরণ সংগ্রাম ছিল। যেকোনও মূল্যে তাদের নির্বাচনে যেতেই হবে, তা না-হলে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। আমাদের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো কিছু না কিছু বলেছিল। তা থেকে আমি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি— অন্তত তিনটি বড় পরশক্তি এই নির্বাচনকে  সফল করার জন্য সমর্থন জানিয়েছে। পরবর্তীকালে সরকারকেও তারা চালিয়ে নিয়ে যেতে চান। এছাড়া আরও কয়েকটি দেশ এই নির্বাচনে সরকারকে সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।

কেননা, এসব পররাষ্ট শক্তির নিজস্ব স্বার্থ জড়িত ছিল।’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টির দর কষাকষির সুযোগ থাকতো। তবে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আওয়ামী লীগ আগ্রহী ছিল না এবং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও আগ্রহী ছিল না, দলের বর্ধিত সভায় এমনটা জানিয়েছেন জি এম কাদের।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল— বিএনপি, আমরা ও আওয়ামীলীগ একসঙ্গে নির্বাচন করলে দর কষাকষির সুযোগ হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই পক্ষই চাইবে, আমাদের সরিয়ে নিয়ে আসতে। ফলে আমরা সেখানে একটা রাজনৈতিক মূল্য পাবো। কিন্তু আমি যখন দেখলাম, বিএনপি আন্দোলনের কয়েকটি ফাঁদে পড়ে গেলো। এটা তাদের দোষ দিচ্ছি না। আন্দোলন করলে কিছু সহিংসতা হয়, বাইরে থেকে এসব সহিংসতা তৈরি করা হয়। কাজেই এই সহিংসতার নাম করে তাদের ঢালাওভাবে গ্রেফতার করা হলো। তাদের সাজা দেওয়া হলো পুরনো মামলায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা হলো। ফলে মাঠে থাকলাম আমরা। তখন মাঠে থাকলাম আমরা আর আওয়ামী লীগ।’

সংসদে বিরোধী দলের নেতা বলেন, ‘বুঝলাম, আমরা না থাকলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। এটা নিয়ে আমরা উৎফুল্ল ছিলাম, যদি নির্বাচনে যাই হয়তো ভালো কিছু সুফল পেতে পারি। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরেও আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন আমাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে আসেনি। একটা পরিষ্কার বিষয় বোঝা গেলো— তারা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার জন্য এতটা লালায়িত ছিল না। তাদের এমন ভাব ছিল আমাদের প্রতি যে, নিলে নেও না নিলে নাই। ’

বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না বুঝতে পেরেছিলাম

নির্বাচনের আগে বিএনপির যে আন্দোলন চলছিল তা সফল হবে না— এটি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল, এমন মন্তব্য করেন জি এম কাদের। তার ভাষ্য, বাংলাদেশে কোনও গণআন্দোলনের মুখে সরকার পরিবর্তন হয়নি। আন্দোলন হয়েছে, মানুষ বিক্ষুদ্ধ হয়েছে— এর সুযোগে অন্য একটি শক্তি এসে সরকারকে পরিবর্তন করেছে। এটা হলো বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সত্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে তিন মাস গণআন্দোলনের মুখে দেশ সম্পূর্ণ অচল হওয়ার পরেও সরকার পরিবর্তন হয়নি। তাই ১০ লাখ, ৫০ লাখ নয়, এক কোটি মানুষও রাস্তায় নামলে সরকারের পরিবর্তন হবে না। বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না। নির্বাচন বন্ধ করা সম্ভব হবে না— এটাতে আমি নিশ্চিত ছিলাম। তার মানে নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে, সরকার ৫ বছর থাকবে।’

বিএনপি নিজের পরাজয় ঢাকতে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছে

জি এম কাদের বলেন, ‘গেলো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা গেলে যা হয়েছে, না গেলেও তাই হতো। আমরা না গেলেও নির্বাচন হতো, জাতীয় পার্টি হয়তো যেতো। সরকারের এমন প্রস্তুতি ছিল। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলেও বর্তমান অবস্থা এমনই হতো। বিএনপি আন্দোলনে পরাস্ত হয়েছে। আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না। দেশের স্বার্থে তারা কাজ করছে, কিন্তু তারা সফল হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘তাদের দোষটা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা বলছে— আমি একটা বিশাল নেতা, আমি নির্বাচনে না গেলে নাকি দেশের ভবিষ্যতই চেঞ্জ হয়ে যেতো। আমি নিজেকে এত বড় নেতা মনে করি না। আমি নির্বাচনে যেতাম আর না যেতাম, দেশ এভাবেই চলতো। এমন পরিস্থিতিই থাকতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে দোষ দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। বিএনপি বলছে, আমি নির্বাচনে না গেলেই নাকি নির্বাচন বানচাল হতো, আর তারা ক্ষমতায় আসতে পারতো। এগুলো হচ্ছে নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য আমার ঘাড়ে দোষ দেওয়া।’

তিনি উল্লেখ করেন, সংসদে আমি বলেছি, নির্বাচন ভালো হয়নি। এমন বাস্তবতায় আর কোনও দল রাজনীতির মাঠে টিকবে না। আমাদের সরকার স্পেস দিচ্ছে না। আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছি, সরকারের সমালোচনা করছি। আমাদের দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। বিএনপিকে তো মাঠে নামতেই দেওয়া হচ্ছে না। মাঠে থাকছে শুধু আওয়ামী লীগ।’

সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো.  মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘প্রশাসনের ভুমিকা ও অর্থের অভাবে আমাদের অনেক জনপ্রিয় নেতা নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছে প্রশাসন।’ তিনি বলেন,  ‘নির্বাচনের পর অনেক সহকর্মী ভুল বুঝে দূরে সরে গেছেন, ভালো থাকলে দুঃখ নেই। কিন্তু যারা প্রার্থী হলেন না, নির্বাচন করলেন না, তারা গেলেন কেন?  পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিনিধিত্ব করেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তার নেতৃত্বেই জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ আছে।’

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় এছাড়ও বক্তব্য রাখেন — কো- চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির, জহিরুল আলম রুবেল, দলের উপদেষ্টা আশরাফুজ্জামান আশু এমপি।

আরও পড়ুন:

/জেডএ/এসটিএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের
জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভা শুরু
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
সর্বশেষ খবর
প্রশ্নফাঁস: বিমানের ডিজিএমসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র
প্রশ্নফাঁস: বিমানের ডিজিএমসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
কথা-কাটাকাটির জেরে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ, স্বামী আটক
কথা-কাটাকাটির জেরে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ, স্বামী আটক
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
সর্বাধিক পঠিত
আর্জেন্টাইন ক্লাবকে জামাল ভূঁইয়ার ২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ফিফার
আর্জেন্টাইন ক্লাবকে জামাল ভূঁইয়ার ২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ফিফার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল লিখলো সওজ, চলছে সমালোচনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল লিখলো সওজ, চলছে সমালোচনা
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটের মৃত্যু
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটের মৃত্যু
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের