ফিরোজায় ধোয়ামোছা শেষ, খালেদা জিয়াকে বরণের প্রস্তুতি

ফিরোজার সামনে, মঙ্গলবার শেষবেলায়টানা ২ বছর ১ মাস ১৫ দিন পর আড়মোড়া ভাঙছে গুলশান ২-এর ৭৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর বাড়িটির। কাল-পরশুর মধ্যে মুক্তি পেয়ে এই বাড়িতেই ফিরবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুই বছর পর খালেদা জিয়ার আগমনের আগাম খবরে শুরু হয়েছে ধোয়ামোছার কাজ। গৃহপরিচারকের কাজে যুক্ত পাঁচজন আর নিরাপত্তারক্ষায় নিয়োজিত ১৬ জনের ব্যস্ততা ফিরেছে ফিরোজায়। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) শেষবেলায় সরেজমিন বাড়িটি ঘুরে দেখা যায়, আশপাশে স্বল্প সংখ্যক মানুষ ভিড় করছেন। প্রিয় নেত্রীর মুক্তির খবরে ভিড় জমাতে চাইলেও নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন করোনাভাইরাসের বিশেষ পরিস্থিতির কথা ভেবে।

মঙ্গলবার শেষবেলায় ফিরোজার সামনে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা ভেতরে প্রবেশে বাধা দেন যথারীতি। জানান, ভেতরে চলছে ধোয়ামোছার কাজ। তবে বাইরের কারও প্রবেশ মানা। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ফিরোজার দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ম্যাডাম কারাগারে যাওয়ার পর থেকে এখানে নেতাকর্মীদের আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আজ তার মুক্তির খবর শোনার পর থেকে বেশ কিছু নেতাকর্মী এসেছেন। এখন আবার এই বাড়ির প্রাণ ফিরে পাবে।’

ফিরোজার সামনে, মঙ্গলবার শেষবেলায়

তিনি আরও বলেন, ‘বাড়ির ভেতরের আমগাছগুলোতে আমের মুকুল এসেছে। আশা করি ম্যাডাম এবার গাছের আম খেতে পারবেন।’ সন্ধ্যার পর আবারও যোগাযোগ করলে এই কর্মকর্তা জানান, ফিরোজার ধোয়ামোছার কাজ শেষ হয়েছে। তবে এখন কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।  ভেতরের কক্ষগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসনকে সবাই বরণ করতে অপেক্ষা করছেন। দেশনেত্রীর এই মুক্তি করোনাভাইরাসের মধ্যেও বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জন্য শুভ সংবাদ। নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক ইতিহাসে এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

মঙ্গলবার বিকালে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পর তার ভাই শামীম ইস্কান্দর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিনি মুক্তি পাওয়ার পর এখন যে বাসভবন ফিরোজা সেখানেই উঠবেন।’

কারাগারে যাওয়ার আগে ৮ ফেব্রুয়ারি ফিরোজা থেকেই আদালতের উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ২০১২ সালের ২১ এপ্রিল গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর রোডের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় ওঠেন তিনি। এই বাড়িটি বিএনপি নেতা মেজর (অব.) কামরুল ইসলামের ছেলে তানভীর ইসলামের। বাড়িটিতে প্রায় সাতটি বেডরুম, লিভিং রুম, একটি সবুজ লন, বাগানসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা আছে। ক্যান্টনমেন্টের মঈনুল হোসেন রোডের বাড়িটি আদালতের রায়ে হারানোর পর কিছুদিন খালেদা জিয়া তার ভাই শামীম ইস্কান্দারের বাড়িতে ছিলেন। এরপর ফিরোজায় বসবাস শুরু করেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এই বাড়ি থেকেই পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের অস্থায়ী আদালতে এসেছিলেন তিনি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে সাজা হওয়ায় সেখান থেকে সরাসরি পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

গুলশানের চেয়ারপারসন কার্যালয়ের সামনে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার কিছু আগে

অসমর্থিত একাধিক সূত্র জানায়, ২০১১ সালে মোসাদ্দেক আলী ফালু মাসিক ৩ লাখ টাকা ভাড়ায় ৩ বছরের জন্য ফিরোজা ভাড়া নেন। এরপর দু’দফায় চুক্তি আবার নবায়ন করা হয়। সর্বশেষ চুক্তিটি নবায়নের পর গত বছরের নভেম্বরে এর মেয়াদ শেষ হয়।

গত এক বছরে সেখানে দুবার এসেছিলেন খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমানকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। তবে খালেদা জিয়ার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা প্রায়ই এসে বাড়িতে অবস্থানরত লোকজনের খোঁজ-খবর নিয়ে যান।

এদিকে, খালেদা জিয়ার মুক্তির খবরে গুলশানে তার কার্যালয়টিও এখন নেতাকর্মীদের অবস্থানে গমগম করছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশ দিলেও করোনাভীতি উপেক্ষা করেই অনেকেই হাজির হয়েছেন গুলশানে। এ নিয়ে নেতারা আলোচনা করে শক্ত অবস্থান জানাবেন, এমন ইঙ্গিত মিলেছে কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার কথায়।

আরও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই খালেদা জিয়াকে মুক্তির সিদ্ধান্ত

আগামীকাল মুক্তি পেতে পারেন খালেদা জিয়া: স্বরাষ্ট্র সচিব

ফাইল পৌঁছালেই খালেদা জিয়ার কারামুক্তির ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ফাইল পেলে খালেদা জিয়াকে জানানো হবে: বিএসএমএমইউ পরিচালক

 

মুক্তি পেয়ে ফিরোজাতেই উঠবেন খালেদা জিয়া

নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশ মির্জা ফখরুলের

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া সরকারের শুভবুদ্ধি: আ স ম রব