জাতীয় পার্টি কোনও কোম্পানি নয়: রওশন এরশাদ

রওশন এরশাদএককভাবে কোনও সিদ্ধান্ত না নিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, দলের চেয়ারম্যানের প্রতি আমার অনুরোধ, দলের কর্মীদের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাপা সব নেতাকর্মী ও সমর্থকের দল। এই দল কোনও ব্যক্তিগত কোম্পানি নয়। রবিবার জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
দুপুর দুইটায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে সময় নির্ধারিত থাকলেও বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হয়।
দলের পূরনো নেতাদের নাম উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, মওদুদ সাহেব, শাহ মোয়াজ্জেম, মিজানুর রজমান চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো ত্যাগী নেতা একসময় আমাদের চেয়ারম্যানের পাশে ছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের পাশে এখন কারা? তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির মাধ্যমে অনেকে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু সাধারণ কর্মীরা কী পেয়েছেন? তারা শুধু পরিশ্রম করে গেছেন। তাই আমাদের নেতাদের কর্মীদের প্রতি ভালোবাসা রাখতে হবে।

পার্টির চেয়ারম্যানের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করে রওশন এরশাদ বলেন, একক ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের এ ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।  আমরা যদি তৃণমুলের  সঙ্গে এবং প্রেসিডিয়ামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতাম, তাহলে বিগত দিনের নির্বাচনে আরও ভালো ফল পেতাম। বাংলাদেশের কোথাও আমরা চেয়ারম্যান-মেয়র নির্বাচন ভালো করতে পারিনি। ইউনিয়ন নির্বাচন ভালো করতে পারিনি। বিগত দিনগুলোয় আমাদের জাতীয় পার্টি ধীরে-ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

আরও পড়তে পারেন:জাপা জাপার কাউন্সিল: ভেন্যু ইঞ্জিনিয়ার্স-সোহরাওয়ার্দী, আসবেন ৩ দেশের অতিথি 

দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে রওশন এরশাদ বলেন, সুস্পষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে আমরা সক্ষম হইনি। যার দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে দলে নতুন কর্মী আসবেন। জাতীয় পার্টি তার পূর্বের গৌরব হারিয়েছে, হারিয়েছে সন্মান ও ঐতিহ্য। আজ আমি এখন বয়সে পৌঁছিয়েছি, আমার কোনও ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি জাতীয় পার্টিতে কোনও সমন্বয়হীনতা দেখতে চাই না।  একটাই চাওয়া পুরনোদের জাতীয় পার্টিতে ফিরিয়ে আনা।

এ সময়ে পূরনো নেতাদের দলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টিতে যেসব নেতা চলে গেছেন। নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে আছেন। তারা আসুন। আমরা অধীর আগ্রহে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছি।   এ সময় তিনি দলের গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা বাতিল করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা বাতিল কিংবা পরিবর্তন করা দরকার। যেন গণতান্ত্রিক হয়। দলে যদি গণতন্ত্র না থাকে তবে দেশে গণতন্ত্র কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্তের চর্চা দলের ভেতরেই হতে হবে। বর্তমানে জাতীয় পার্টিতে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।

আগামী কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তনেরও আহ্বান তিনি। আগামী ১৪ মে জাতীয় পার্টির সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, প্রথম যে সংসদীয় দলের বৈঠক হয় সেখানে তাকে (এরশাদ) বলা হয়েছে, পার্টি গঠনতন্ত্র মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে; তাকে সরাসরি বলা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তাকে বলা হয়েছে পরিবর্তন করার জন্য।

আরও পড়তে পারেন: সাত ব্যাংক২০১৫ সালে এক পয়সাও মুনাফা হয়নি ৭ ব্যাংকের

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জনসমক্ষে তার কাছে প্রেস কনফারেন্স করে বলছি। চেয়ারম্যান-কো চেয়ারম্যান মহাসচিব যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে সম্মেলনের দরকার নেই। আমাদের সকলের মনের কথা চেয়ারম্যান নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। তবে তার কিছু সিদ্ধান্ত গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়নি, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় সীমা বেধে কাজ করছি না। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। পরিণতি দেখেই আমরা পদক্ষেপ নেব। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা যেমন ফিল করি। তেমন উনিও ফিল করবেন। পজেটিভ রেসপন্স চাইছি।

/ইএইচএস/এমএনএইচ/