বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতির সদস্য পদ স্থগিত করলো বামজোট

সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি  ও জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলনের সদস্যপদ স্থগিত করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। মঙ্গলবার (২৪ মে) জোটের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জোটের সাবেক সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘বামজোট বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি  ও গণসংহতি আন্দোলনের সদস্যপদ স্থগিত করেছে। তারা আলাদা জোট করতে চেয়েছে। দুইটা জায়গায় তো থাকা যাবে না।’

বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘সবাই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই একমত হয়েছে যে, তারা যেহেতু আরেকটি জোট প্রক্রিয়ায় আছে, তাহলে তারা একটাই করুক। তারা যদি ভালো কিছু করতে পারে, সেখানে থাকবে। আর যদি ফিরে আসে, তাহলে সদস্যপদ ফিরে পাবে। সে কারণে তাদের সদস্য পদ স্থগিত রাখা হয়েছে। জোটের বক্তব্য, বিবৃতিতে তাদের নাম এখন থেকে উল্লেখ করা হবে না।’

উল্লেখ্য, গত ৯ মে বাংলা ট্রিবিউন বামজোটের অস্থিরতা ও ভাঙনের আশঙ্কা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সদস্যপদ স্থগিতাদেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরাই বলেছি, সদস্যপদ নিষ্ক্রিয় রাখার জন্য। আমরা মনে করি, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে সব বাম, গণতান্ত্রিক শক্তিকে বৃহত্তর আন্দোলন ও তার ভিত্তিতে আন্দোলনের প্ল্যাটফরম গড়ে তোলা দরকার। চিন্তা ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা বামজোটের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভোটাধিকার রূপান্তরের কর্মসূচির ভিত্তিতে অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলে আসছি। সম্প্রতি সাত দলের ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়াটি নিয়েও বামজোটকে আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি  ও গণসংহতি আন্দোলন ছাড়া বাকি সদস্যরা কেবলমাত্র বাম ঐক্যে আগ্রহী। তাই তারা সদস্যপদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, তারাও ফ্যাসিবাদ অবসানে গণতন্ত্রের লড়াইয়ে রাজপথে থাকবেন। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রক্রিয়া আমরা অনুসন্ধান করতে সচেষ্ট থাকবো।’

জোটসূত্র জানায়, রাজধানীর পুরানা পল্টনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার বিকাল পৌনে পাঁচটায় বামজোটের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে প্রায় সব দলের কয়েকজন করে প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে জোটের সদস্য পদ রেখেও কীভাবে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়া গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়ে সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকি বক্তব্য দেন। তারা বক্তব্যে সাত দলীয় রাজনৈতিক মঞ্চকে (গণতন্ত্র মঞ্চ) জোট হিসেবে না দেখে বৃহত্তর ঐক্যের একটি প্ল্যাটফরম হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও জোটের বাকি সদস্য দলগুলো তাদের প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি।

জোটের শরিক একটি দলের প্রধান নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান,সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকি বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন। তাদের দলের সদস্য পদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হলেও বৈঠকটি আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২০১৮ সালের ১৮ জুলাই গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের প্রথম সমন্বয়ক ছিলেন সাইফুল হক। পরবর্তী সময়ে আরও একবার তিনি জোটের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। ড.ফখরুদ্দিনের শাসনামলে ২০০৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর গণতান্ত্রিক বামমোর্চা গঠিত হয়। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিও জোটের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।

গণসংহতি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সূত্রগুলো মনে করছে, সাত দলীয় মঞ্চ আন্দোলন-কর্মসূচিতে ইতিবাচক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হলে বামজোটের শরিকদেরও যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেই সম্ভাবনা আজকের বৈঠকে নেতাদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে, বলে দাবি করেএকাধিকসূত্র।

উল্লেখ্য, বুধবার (২৫ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সচিবালয় অভিমুখে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বিক্ষোভ রয়েছে। ওই বিক্ষোভে সাত দলের শীর্ষ নেতারা অংশগ্রহণ করবেন।

অতি আবশ্যক খাদ্যপণ্যের দাম কমানো,গ্যাস-বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধসহ মানুষের বাঁচার জরুরি দাবিতে অনুষ্ঠেয় এই বিক্ষোভে সংহতি জানাবেন মাহমুদূর রহমান মান্না,অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, জোনায়েদ সাকি, রফিকুল ইসলাম বাবলু,শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, হাসনাত কাইয়ুম, নূরুল হক নূর।

আরও পড়ুন:

বৃহত্তর ঐক্য নাকি বাম ঐক্য: সাত দলীয় মঞ্চকে কেন্দ্র করে বামজোটে অস্থিরতা, ভাঙনের শঙ্কা