X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৫ এপ্রিল ২০১৮, ২১:১৪আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০১৮, ২১:১৬

‘বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল থাকলেও ব্যাংকিং খাত দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে গেলেও ব্যাংকিং খাত ক্রমেই উল্টো দিকে হাঁটছে। একদিনে নয়, ব্যাংকের এমন হাল ধীরে ধীরেই হয়েছে। এখান থেকে উত্তরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী ভূমিকায় থাকতে হবে।’ দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে ‘সবল অর্থনীতি, দুর্বল ব্যাংক’ শীর্ষক বৈঠকিতে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর শুক্রাবাদে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিও থেকে এ আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করে এটিএন নিউজ। পাশাপাশি বাংলা ট্রিবিউনের ফেসবুক এবং হোমপেজেও লাইভ দেখা যায় বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি। মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় বৈঠকিতে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারোয়ার, প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক সালাম মুর্শেদী, সিপিডি’র অর্থনীতি বিশ্লেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক গোলাম মওলা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘নানাভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ডোবানো হয়েছে। আর এটা কিন্তু একদিনে নয়, দীর্ঘদিন ধরে তিলে তিলে ব্যাংকগুলোকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে যখন থেকে অর্থ ব্যাংকিং বিভাগ চালু হলো তখন থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পতন শুরু হলো। ওই সময়ের পর থেকে দুর্নীতি বেপরোয়াভাবে শুরু হয়। ব্যাংকিং খাতে ধসের পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও ক্ষমতা নিয়েও অনেক প্রশ্ন আছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ তিনি বলেন, ‘দুর্বৃত্ত শেণিরা ভালো ব্যবসায়ীকে সামনে আসতে দেয় না। যারা নিয়মনীতি না মেনে ব্যবসা করে তারা ক্ষতিই করে। আমার প্রশ্ন সরকার শক্তিশালী নাকি দুর্বৃত্তরা শক্তিশালী? এই দুর্বৃত্তরা ভালো ব্যবসায়ীকে লাইনে আসতে দিতে চায় না। তারপরও সামগ্রিকভাবে গত কয়েক বছরের অর্থনীতির সূচক অসাধারণ। ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে প্রবৃদ্ধি।’ 

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নানাভাবে ডোবানো হয়েছে: ইব্রাহিম খালেদ

প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘বর্তমানে ব্যবসার কারণে দেশের অনেক অগ্রগতি হচ্ছে। এই বেসরকারি ব্যাংকগুলো দেশের অর্থনীতি অনেক বড় জায়গায় নিয়ে এসেছে। তারপরও ব্যাংকিং খাতকে আরও এগিয়ে নিতে সরকারি ফান্ড যদি বেসরকারি ব্যাংকে আসে তাহলে তারল্য সমস্যা থাকবে না।’

প্রিমিয়ার-ব্যাংকের-পরিচালক-সালাম-মুর্শেদী তিনি বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। আজ থেকে ২০/২৫ বছর আগে গেলে দেখা যায়, আমরা সবাই চাকরিজীবী বা কৃষিজীবীর সন্তান। ব্যবসা করার প্রবণতা হচ্ছে এখন। কোনও ব্যাংকের টাকা যদি সামান্য এদিক-ওদিক হয়, তাহলে সেটাকে এমনভাবে বলা হয় মনে হয় গোটা ব্যাংকিং খাতটিই হয়তো শেষ হয়ে গেছে। এই ধরনের প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’ 

আরও পড়ুন: ‘বেসরকারি ব্যাংকগুলো দেশের অর্থনীতি বড় জায়গায় নিয়ে এসেছে’

আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারোয়ার বলেন, ‘আজ দেশে যে ব্যাংকিং খাত রয়েছে তা কর্মাশিয়াল খাত। আমাদের কোনও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক নেই। ফলে আমাদের দেশে প্রথম থেকেই ব্যাংকিং খাতে স্ট্রাকচারাল ইমব্যালান্স রয়েছে। আর এ কারণেই ব্যাংকগুলোর সবসময়ই একটি বিপর্যয়ের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকেই।’

তিনি বলেন, ‘অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন সেটা ব্যাংক থেকেই হোক বা অন্যজনের পকেট থেকেই হোক, সেটা তো একটা দুর্নীতি। এই দুর্নীতিবাজদের ধরার দায়িত্ব সবারই আছে। কিন্তু যখন ব্যাংক থেকে কেউ ঋণ গ্রহণ করে তখন বলা হয় টাকা তুলে নিয়ে এলাম। আবার যখন ঋণ দেওয়া হয় তখন বলা হয় টাকা নিয়ে গেলো। এই ধরনের বক্তব্য সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে এক ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।’

আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ আলম সারোয়ার তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসা করতে পুঁজি লাগে। কিন্তু পুঁজি অনেকগুলো সূত্র থেকেই আসতে পারে। সেই পুঁজির সঙ্গে কিছু ঋণও থাকে। আমাদের দেশে কখনোই অধিক পুঁজি ছিল না। কারণ এ দেশে স্বর্ণের খনি নেই, বিশাল ধন-দৌলতও নেই। ফলে ব্যবসা শুরু হয় খুবই অল্প পুঁজি দিয়ে। আমরা পুঁজিবাদের কাঠামোতে এগিয়েছি কিন্তু ব্যাংকিং আইনি কাঠামো এগোয়নি। এগিয়েছে সম্পূর্ণ একটা আস্থার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সেই আস্থা নষ্ট হলে ধস নামতে সময় লাগবে না।’ 

আরও পড়ুন: ‘সবসময়ই একটি বিপর্যয়ের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ব্যাংকগুলোর’

সিপিডি’র অর্থনীতি বিশ্লেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর আগে থেকে দেখছি ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা তৈরি হচ্ছে। প্রতিবছর বৈশ্বিক অর্থনীতির র্যাং কিং করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতির র্যাং কিংও হয়। তাতে দেখা যায় দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, তবে ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতের অর্থনীতিতে দুর্বলতা রয়েছে। তবে এতে ব্যাংকিং খাত যে হুট করে অর্থনীতিকে ধসে ফেলে দেবে তেমন নয়, তবে দীর্ঘমেয়াদী একটি সংকট তৈরি করবে।’

সিপিডির অর্থনীতি বিশ্লেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম তিনি বলেন, ‘এখন সমস্যা হয়েছে দৃষ্টিভঙ্গির জায়গায়। যেখানে প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তি, সরকারের চেয়েও কোনও কোনও ক্ষেত্রে সংগঠনের বিষয়টি বড় হয়ে প্রতিষ্ঠানকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। বাংলদেশের প্রেক্ষিত এমন যে, বড় কিছু গ্রুপের হাতেই ঋণগুলো আটকে যাচ্ছে ঘুরে ঘুরে। এভাবে বড় কোনও গ্রুপের হাতে ব্যাংকের মালিকানা আটকে যাচ্ছে। আগামীতে এমন ঘটনা পুনরায় ঘটবে কিনা তাও দেখতে হবে। তাছাড়া সব মিলিয়ে যেকোনও নীতি/সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হতে হবে।’ 

আরও পড়ুন: ব্যাংকিং খাতের অর্থনীতিতে দুর্বলতা রয়েছে: খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক গোলাম মওলা বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক গোলাম মওলা বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের এখন যে পরিস্থিতি তা খুবই সমস্যার মধ্যে রয়েছে। সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতই সমস্যায় রয়েছে। ডেসপারেট ঋণ বিতরণসহ ব্যাংকিং খাতে তারল্যের সঙ্কট, আর্থিক সঙ্কট প্রকট আকারে ধারণ করেছে, ফলে অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ সমস্যায় পড়েছে। ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা না থাকার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বা যারা নিয়ন্ত্রক তাদের কোথায় যেন অনীহা কাজ করে, যেখানে এই ব্যাংকটিকেই শক্তিশালী অবস্থানে থাকা প্রয়োজন।’

/আরএআর/এমও/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১৩৯ উপজেলায় ভোট বুধবার, কেন্দ্রে গেলো সরঞ্জাম
১৩৯ উপজেলায় ভোট বুধবার, কেন্দ্রে গেলো সরঞ্জাম
‘প্রমাণ-অপ্রমাণের যাত্রা সুদীর্ঘ, সেখানে জড়িয়ে আছে হাহাকার’
বিচারপ্রার্থীদের প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি‘প্রমাণ-অপ্রমাণের যাত্রা সুদীর্ঘ, সেখানে জড়িয়ে আছে হাহাকার’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
নিলামে উঠছে ম্যারাডোনার গোল্ডেন বল
নিলামে উঠছে ম্যারাডোনার গোল্ডেন বল
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট