দেশের রিজার্ভ এখন যা আছে, তার চেয়ে আরও কমে গেলে বিপদ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে একসময় যদি তা ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, তখন আইএমএফের সহায়তা পাওয়া যাবে না।
সোমবার (৯ অক্টোবর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সঙ্গে সংলাপ’।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ যেভাবে ধারাবাহিকভাবে কমছে, তার সঙ্গে তিনি শ্রীলঙ্কার মিল খুঁজে পান। যদিও তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি নিঃসন্দেহে শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় একটি রফতানি খাত আছে। সেই সঙ্গে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, যা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি।’ সে কারণে তিনি বিশ্বাস করেন না, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে।
রেহমান সোবহান আরও বলেন, দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। তার মানে এই নয় যে দেশে প্রবাসী আয় আসা বাস্তবে কমে গেছে; আনুষ্ঠানিক পথে না এসে অনানুষ্ঠানিক পথে আসছে প্রবাসী আয়, যার মূল মাধ্যম হুন্ডি। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে জমা না হয়ে হুন্ডিতে জমা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের বাইরে জমা হচ্ছে। যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেন, তাদের জন্য এটা সুবিধাজনক হয়েছে।
রেহমান সোবহান বলেন, দেশের আর্থিক খাতের সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। ঋণ নেওয়ার পর ফেরত না দেওয়াটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এটা করার জন্য বড় ব্যবসায়ী নয়; বরং যারা এসব করছেন, তারা নিজেদের বড় রাজনীতিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। অনুষ্ঠানে তিনি চলমান ডলার সংকট নিরসনে অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়ে বলেন, নীতি-নির্ধারকদের এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগে বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানি করবেন না কি ডিম কিংবা সার আমদানি করবেন।
রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে কমে দাঁড়ায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে সেটা আছে ১৮ বিলিয়ন ডলারে। রিজার্ভ যদি ১০ বিলিয়ন ডলারও হয়, তবে নীতি-নির্ধারকদের রিজার্ভ বাঁচাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।