X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাবেক এমডির অ্যাকাউন্টে গ্রাহকের ৬০ লাখ টাকা!

গোলাম মওলা
২০ নভেম্বর ২০২৩, ২৩:৩৯আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ২৩:৩৯

মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন একটি বিমা কোম্পানির সাবেক এমডি। স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা তিনি। গ্রাহকের ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা তিনি তার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা করেছেন। আত্মসাৎকৃত এই টাকা উদ্ধারে রবিবার (১৯ নভেম্বর) তাকে চিঠি দিয়েছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আইডিআরএ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড থেকে পাওয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট অনুযায়ী আপনার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে কোম্পানির গ্রাহকের প্রিমিয়ামের মোট ৬০ লাখ ৭০ হাজার ৭০০ টাকা জমা হয়েছে। গ্রাহকের প্রিমিয়ামের অর্থ আপনার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে রাখা আত্মসাতের শামিল। ওই টাকা আপনি ফেরত প্রদান করবেন মর্মে গত ৯ অক্টোবর স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু আপনি অদ্যাবধি ওই টাকা জমা প্রদান করেননি।

এমতাবস্থায়, আপনার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা করা কোম্পানির প্রিমিয়ামের মোট ৬০ লাখ ৭০ হাজার ৭০০ টাকা কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জমাদানপূর্বক আবশ্যিকভাবে প্রমাণসহ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য বলা হলো। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের জন্য ফৌজদারি মামলাসহ প্রচলিত আইন অনুযায়ী যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে গত মে মাসে কোম্পানিটির নতুন বিমা পলিসি ইস্যুর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

এর আগে আইডিআরএ’র তদন্তে স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার তথ্য বেরিয়ে আসে। আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ ব্যয় করার পাশাপাশি কোম্পানিটিতে মাত্রাতিরিক্ত কমিশন ব্যয় হয়েছে। ৬ মাস আগে চিঠিতেও উল্লেখ করা হয়, কোম্পানির গ্রাহকের প্রিমিয়ামের টাকা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও)  ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসেবে লেনদেন হয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়োগের শর্ত অমান্য করে ইনসেন্টিভ বোনাস গ্রহণ করেছেন সিইও।

 

বিভিন্ন অঞ্চলের ৫৯টি লেনদেন

এর আগে আইডিআরএ’র তদন্তে স্বদেশ লাইফের সাবেক সিইও ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৫৯টি লেনদেনের তথ্য উঠে আসে। ইসলামী ব্যাংকের খিলগাঁওয়ের নবীনবাগ শাখায় থাকা ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব (হিসাব নং-২০৫০৬৩৩০২০০০৭৩৮১৮) এই লেনদেন হয়।

২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এই ব্যাংক হিসাবটি খুলেন ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন। ব্যাংক হিসাব খোলার পর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এই ৫৯টি লেনদেন সম্পন্ন হয়। একাধিক বিমা কোম্পানির সিইও এ প্রসঙ্গে বলেন, কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা সিইও’র ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করার আইনি সুযোগ নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সেটিকে মানিলন্ডারিং বা অর্থ পাচারের সঙ্গে তুলনা করা যায়।

এদিকে ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টার্গেট ইনসেন্টিভ নেন তিনি। যা সিইও’র নিয়োগের শর্তের পরিপন্থি।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বার্ষিক ব্যবসা সংগ্রহের টার্গেট দিয়ে অবৈধভাবে সিইওকে টার্গেট ইনসেন্টিভ দিয়েছে বলে আইডিআরএ’র তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেন ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন। তিনি তদন্ত দলকে জানান, পরিচালনা পর্ষদ তাকে তার টার্গেট পূর্ণ করার জন্য ২ শতাংশ ইনসেন্টিভ বোনাস দিয়েছে। তার বেতন-ভাতাদি কম হওয়ায় তাকে এ সুবিধা দিয়েছে বোর্ড।

এর আগেও সিইও’র ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে কোম্পানির গ্রাহকের প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেন হওয়ায় বিমা আইন ২০১০ এর ৮০ ধারা এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা অনুযায়ী সিইও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন আইডিআরএর তদন্ত কমিটি।

এ প্রসঙ্গে জানতে তার একাধিক মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে আইডিআরএ’র তদন্ত কমিটির কাছে ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন বক্তব্যে বলেছেন, তিনি ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর কোম্পানি ডিএমডি হিসেবে যোগদান করেন। বোর্ড  যখন তাকে এমডি পদে দায়িত্ব দেয় তখন কোম্পানি ছিল মৃতপ্রায়। ২০১৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার সময় পাঁচ বছর বয়সী কোম্পানির নবায়ন প্রিমিয়াম ছিল মাত্র ৮১ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮৩ টাকা। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর সর্বমোট ব্যবসা করেন ৬ কোটি ২ লাখ ১৩ হাজার ৪১০ টাকা।

অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ দিয়েছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্সে মুখ্য নির্বাহীর পদটি শূন্য ছিল প্রায় আড়াই বছর। তারপর ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন কোনও রকম অনুমোদন ছাড়াই সিইও’র চলতি দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে তাকে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে সিইও নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়।

আইন অনুসারে ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীনের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছিল না। শুধু তাই নয়, তিনি সিইও পদে নিয়োগের অনুমোদনের জন্য দাখিল করা কাগজপত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেন। এসব বিষয়ে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আপত্তি জানালেও সংস্থাটির তৎকালীন চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন তা আমলে নেননি। বরং প্রভাব খাটিয়ে তিনি ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীনকে অনুমোদন দেন। এ অনুমোদন তিনি দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাবস্থায়।

ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীনকে সিইও হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার সপ্তাহখানেক পরেই এম মোশাররফ হোসেন আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান।

আইডিআরএ’র একটি নথিতে দেখা যায়, বিএসএস পাসের সনদ তিনি হারিয়ে ফেলেছেন বলে আইডিআরএ’র কাছ দাবি করেন। হারানো এই সনদ ২৪ বছরেও তিনি তুলতে পারেননি বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইডিআরএ’র আরেক নথিতে বলা হয়েছে, ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন নিয়ম ভঙ্গ করে বা বিমা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তিন মাসের স্থলে দুই বছর ছয় মাস ধরে কৌশলে সিইও নিয়োগ ছাড়াই সিইও’র চলতি দায়িত্ব পালন করে অপরাধ করেছেন।

 

/এমএস/
সম্পর্কিত
সোনালী লাইফ’র পরিচালনা পর্ষদ স্থগিত, প্রশাসক নিয়োগ
জাপানি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এফবিসিসিআই’র বৈঠক‘উদ্ভাবনীসেবার মাধ্যমে গ্রাহক ও বিমা খাত লাভবান হবে’
রোগীদের মৃত্যু ঠেকাতে ‘কিডনি সুরক্ষা বিমা’র দাবি
সর্বশেষ খবর
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলায় বিজয়ী হলেন যারা
কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলায় বিজয়ী হলেন যারা
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার