লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের উদ্যোক্তা, ক্রেতা এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য নেটওয়ার্কিং, পণ্যের পরিচিতি, স্থানীয় ও রফতানি বাজার সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ের সুযোগ রেখে ঢাকায় শুরু হচ্ছে দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপো- ২০২৫।
মিন্টো রোডের শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আগামী ২৯ ও ৩০ মে মেলাটি অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতি (বাইশিমাস) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বাইশিমাস সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক লিখিত বক্তব্যে মেলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। বাইশিমাস ও এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস প্রকল্পের (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) যৌথ উদ্যোগে এক্সপোটি অনুষ্ঠিত হবে।
লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের মালিকদের সংগঠন বাইশিমাস বলছে, দেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি, যন্ত্রাংশ ও উদ্ভাবনী পণ্য নিয়ে এই এক্সপোতে অংশগ্রহণ করবে। প্রদর্শনকারীরা নির্ধারিত প্যাভিলিয়নগুলোতে তাদের পণ্য ও সেবা উপস্থাপন করবেন। এতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪৪টি স্টল থাকবে। এক্সপোতে বিভিন্ন সাব-সেক্টরের প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে— যেমন মেটাল কাস্টিং, স্পেয়ার পার্টস, কৃষি যন্ত্রপাতি, অটো যন্ত্রাংশ, ডাই ও মোল্ড, এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি। এটি শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং একটি সোর্সিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে দেশীয় শিল্পপতিরা নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরার পাশাপাশি রফতানির নতুন বাজার খুঁজে পাবে।
লিখিত বক্তব্যে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ও কৌশলগত শিল্প খাত। এই খাত শুধু শিল্পখাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ সরবরাহ করছে না, বরং দেশের কৃষি, বিদ্যুৎ, টেক্সটাইল, নির্মাণ এবং গৃহস্থালি যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি ছোট-বড় লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এতে সরাসরি তিন লক্ষাধিক ও পরোক্ষভাবে ৩০ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই খাতের অবদান দেশের জিডিপিতে প্রায় ৩ শতাংশ।
তিনি বলেন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের বৈশ্বিক বাজার ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ মাত্র ৭৯৫ মিলিয়ন ডলারের রফতানি করতে পারে। অথচ এই সেক্টরের প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে রফতানি ১০০ বিলিয়নে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
এ খাতটি দেশীয় শিল্প খাতের ৫০ শতাংশ যন্ত্রাংশের চাহিদা পূরণ করে থাকে। এটি রফতানি বহুমুখীকরণ, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রশিক্ষণ, উৎপাদন দক্ষতা উন্নয়ন, কমপ্লায়েন্স মান বজায় রাখা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং বাজার সংযোগ তৈরির মতো কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে।
এই সেক্টরের উন্নয়নে কমপ্লায়েন্স শিল্প এলাকা গঠন, পণ্য বহুমুখীকরণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, পেটেন্ট ও ডিজাইন সুরক্ষা, নারী, যুব শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও রফতানিতে নগদ সহায়তার দাবি করেন উদ্যোক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, মার্কেট লিংকেজ, উদ্যোক্তাদের রফতানি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। মেলাটি সাধারণত মার্কেট লিংকেজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আগামী ২৯ মে সকালে এক্সপো শুরু হবে এবং দুপুর ৩টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুবুর রহমান এর উদ্বোধন করবেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস প্রকল্পের পরিচালক আমিনুল ইসলাম, বাইশিমাসের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ, সহসভাপতি রাজু আহমেদ, পরিচালক আবু হোসেন খোকনসহ আরও অনেকে।