তুলা আমদানিতে আরোপিত ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দেশের টেক্সটাইল মিল মালিকরা। দাবি না মানলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
শনিবার (৫ জুলাই) রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান সংগঠনের নেতারা।
বিটিএমএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সোমবারের মধ্যে যদি সরকার এই ট্যাক্স প্রত্যাহার না করে, তাহলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তার ফল হবে উল্টো। বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে গেছে, কেউ তুলা ছাড় করছে না।’
সরকার এই করকে সমন্বয়যোগ্য বলে দাবি করলেও বাস্তবে তা ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই বলে অভিযোগ করেন মামুন। তিনি বলেন, ‘এই কর পরিশোধ করতে হলে আমাদের নতুন করে ব্যাংক ঋণ নিতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে শিল্প খাত টিকবে না।’
বর্তমানে টেক্সটাইল খাতে করপোরেট করহার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও নতুন এআইটির কারণে কার্যকর করহার প্রায় ৫৯ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
মামুন বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিকের বেতন বাড়ানো, রফতানি প্রণোদনা কমানোসহ নানাবিধ চাপের মুখে শিল্প খাত আজ বিপর্যস্ত। তার ওপর নতুন করে ট্যাক্স-ভ্যাট আরোপ শিল্পকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলো যখন টেক্সটাইল খাতে নানা সুবিধা দিচ্ছে, তখন আমাদের শিল্পে অতিরিক্ত কর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন প্রায় ৯০ শতাংশ কারখানা মালিক তাদের প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে আগ্রহী।’
বিটিএমএ’র আরেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেউদ্দিন জামান খান বলেন, ‘এটা কোনও বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত নয়, মনে হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে দেশের টেক্সটাইল খাতকে ধ্বংস করার জন্য এ ধরনের নীতি নেওয়া হয়েছে।’
সংগঠনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘আমার নিজস্ব একটি টেক্সটাইল মিল আছে, যেখানে তৈরি সুতা ডেনিম ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে আমাকে বিদেশ থেকে বিশেষ করে ভারত থেকে সুতা আমদানি করতে হচ্ছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে দেশের কোনও টেক্সটাইল মিল টিকে থাকতে পারবে না। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, অবিলম্বে তুলা আমদানির ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর এবং অন্যান্য নতুন ট্যাক্স-ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক।’
সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ ছাড়াও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন এবং তারাও একই দাবি জানান।
টেক্সটাইল মালিকদের অভিযোগ, এমন নীতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের রফতানিভিত্তিক শিল্প খাত চরম ঝুঁকিতে পড়বে এবং দেশীয় শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।