X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাজারীবাগে কষ্ট আর আনন্দ, রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহতের আশঙ্কা

শফিকুল ইসলাম
০৯ মার্চ ২০১৭, ০৫:০৪আপডেট : ০৯ মার্চ ২০১৭, ১৬:১৭

হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পের ফাইল ছবি কষ্ট আর আনন্দ পাশাপাশি বিরাজ করছে রাজধানীর হাজারীবাগে। সব ট্যানারি অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশের পর কষ্টে আছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে আদালতের এ সিদ্ধান্তে অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সেখানে বসবাসকারী বাসিন্দারা। তাদের আনন্দ, এবার হয়তো হাজারীবাগ থেকে চিরবিদায় নিচ্ছে অস্বস্তিকর পরিবেশ। আর সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এর ফলে কাঙ্ক্ষিত রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে।

আদালতের নির্দেশের পর হাজারীবাগের অনেক ব্যবসায়ী হতবাক হয়ে পড়েছেন।তারা বলছেন, সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিলো। এর আগেই এ ধরণের একটি সিদ্ধান্ত তাদেরকে হতবাক করেছে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তারা।

আর স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য হচ্ছে, অনেকদিন ধরেই শুনছিলাম, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি চলে যাচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর টালবাহানা করছেন। কিন্তু ট্যানানি সরাচ্ছিলেন না। এবার আদালতের রায়। তাই বাস্তবায়ন করতেই হবে। তাই তারা অনেকটাই স্বস্তিতে। তাদের আশা, এবার হয়তো হাজারীবাগ থেকে চিরবিদায় নিচ্ছে অস্বস্তিকর পরিবেশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ রায়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের চামড়া খাতে। আন্তর্জাতিক বাজারেও চামড়া বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। এরই মধ্যে বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, পরিবেশবাদী দেশি-বিদেশি সংগঠন জানিয়ে দিয়েছে পরিবেশবান্ধব কারখানায় চামড়া প্রক্রিয়াকরণ না করলে বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত পণ্য আমদানি করা হবে না।

জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জন ব্যাহত হতে পারে। অর্থবছর শেষ হতে আর মাত্র তিন মাস সময় থাকলেও রফতানি লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩-৪শ মিলিয়ন ডলার পিছিয়ে রয়েছে চামড়া খাত। ফলে এমনিতেই এ সময়ে মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব। আর এই অসম্ভবকে আরও বাস্তব করে তুলেছে আদালতের এই সিদ্ধান্ত।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১৫৫টি কারখানার বিপরীতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারি কোষাগার থেকে ট্যানারি শিল্প মালিকদেরকে সহায়তা বাবদ বরাদ্দকৃত ২৫০ কোটি টাকার মধ্যে ১১২ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ জানিয়েছেন, সাভারে পুরোপুরি চামড়া শিল্প স্থানান্তরে জুন-জুলাই পর্যন্ত সময় লাগবে। সেখানে শুধু ব্লু ওয়েট তৈরি করা হচ্ছে। ডাম্পিং স্টেশন নির্মানের কাজ এক শতাংশ সম্পন্ন করা হয়নি। আর প্লটগুলো রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়া হয়নি। জমির রেজিস্ট্রেশন না দিলে শিল্প মালিকরা হাজারীবাগ থেকে মেশিনারিগুলো স্থানান্তর করতে পারবে না। কারণ এর বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া আছে। পাশাপাশি ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ পেতেও প্লটের রেজিস্ট্রেশন জরুরি।

সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা বাবদ বরাদ্দকরা বাকি টাকা জরুরি ভিত্তিতে ছাড় করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সাখাওয়াত উল্লাহ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সহায়তার টাকা অন্য ব্যবসায় খাটানোর অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ, সহায়তার অর্থ তিনধাপে দেওয়া হয়, যা মনিটর করে বিসিক।

আদালত কর্তৃক জরিমানা নির্ধারণ প্রসঙ্গে সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘৪ লাখ স্কয়ার ফিট কারখানা মালিককে জরিমানা গুনতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। আবার ৪ হাজার ফিট কারখানারও জরিমানা ১০ হাজার টাকা। যা আসলেই সমস্যা জটিল করে তুলেছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শাহীন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “এ বছর এমনিতেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া রফতানি করতে পারব না। তার ওপর যদি এ শিল্পকে এভাবে ‘শাটডাউন’ করা হয় তাহলে ভবিষ্যত আর কতো ভালো হবে তা পরিষ্কার বোঝা যায়।”

শাহীন আহমেদ বলেন, ‘সরকার ও আদালতের এ সব সিদ্ধান্তে আমরা আতঙ্কে আছি। কখন কী হয়?’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাভারে এখনও আমরা গ্যাস সংযোগ পাইনি। বিদ্যুৎ সংযোগেও সমস্যা রয়েছে। বর্জ্য শোধনাগার নির্মানের কাজও শেষ করা যায়নি। কিভাবে আমরা সেখানে কারখানা চালাব।’

রায় পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহীন আহমেদ বলেন, ‘আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প-কারখানা সাভারে স্থানান্তর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিক নিজ নিজ কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি নাই। সরকার তথা বিসিকের পক্ষ থেকে যেটুকু কাজ বাকি রয়েছে তা সম্পন্ন করবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।’

উল্লেখ্য, ৬ মার্চ সোমবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

/এসআই/এএ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানাতে গিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানাতে গিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
শান্ত-লিটনদের ব্যাটিং দেখে ভয় হচ্ছে বিসিবি সভাপতির
শান্ত-লিটনদের ব্যাটিং দেখে ভয় হচ্ছে বিসিবি সভাপতির
প্লে অফের দিন বেছে নিতে দুই ক্লাবকে চিঠি
প্লে অফের দিন বেছে নিতে দুই ক্লাবকে চিঠি
সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রাজনৈতিক মামলা
অরাজনৈতিক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশসিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রাজনৈতিক মামলা
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র