মহামারি করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে কারখানা, অফিস-আদালত চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। কিন্তু অর্ধেক শ্রমিক দিয়ে গার্মেন্টস কারখানা চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক। তবে কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এ বিষয়ে বিজিএমইএ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সংগঠনের নেতারা বলছেন, ৫০ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে কোনোভাবেই কারখানা চালানো সম্ভব নয়। বিজিএমইএ’র সভাপতির লেখা চিঠিতেও এমনটিই তুলে ধরা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনার প্রথম ঢেউ সামলে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু করেছে। কারখানাগুলোতে বিদেশি ক্রেতার অর্ডার আসছে ও শিপমেন্ট চলছে। এ অবস্থায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানতে শুরু করায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে কারখানা চালু রাখতে হলে কারখানাগুলো সময়মতো শিপমেন্ট করতে পারবে না। ফলে আরও বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় কারখানাগুলো সরকার প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করেছিল বিধায় তৈরি পোশাক শিল্পে করোনার সংক্রমণ ছিল ০.০৩% এর নিচে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রথম ঢেউয়ের পর করোনার সংক্রমণ কমলেও কারখানার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ শিথিল করা হয়নি।
রুবানা হক লিখেছেন, কারখানাগুলো যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছে কিনা, তা কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। কারখানা খোলা ও বন্ধের সময় গেটে যেন শ্রমিক সমাবেশ না ঘটে, সেজন্য কারখানাগুলো শ্রমিক প্রবেশ ও বহির্গমনের সময় ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময় অনুসরণ করছে।
বিজিএমইএ’র সভাপতি আরও বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরু থেকেই বিজিএমইএ থেকে কারখানাগুলোকে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য দফায় দফায় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। চিঠিতে রুবানা হক উল্লেখ করেন, কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছে। সুতরাং, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালানোর সর্বোচ্চ প্রস্ততি আমাদের আছে। পোশাক শিল্পে বর্তমানে প্রকৃত পরিস্থিতি হচ্ছে— চলমান করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপের কারণে পশ্চিমা বিশ্বে তৈরি পোশাকের অর্ডার ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কমেছে। তিনি আরও বলেন, ক্রেতারা তাৎক্ষণিক শিপমেন্টের পাশাপাশি দাম কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন, অন্যথায় অর্ডার বাতিলের হুমকি আছে। যা আমাদের জন্য মোটেও কাম্য নয়। এমতাবস্থায়, দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করে সকল কারখানায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা গাইডলাইন যথাযথভাবে অনুসরণ পূর্বক কারখানা চালু রাখতে হবে।
এর আগে গত বুধবার (৩১ মার্চ) বিজিএমএ’র সব সদস্যকে ১৬টি নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় কারখানায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করাসহ বেশকিছু বিষয় পরিপালন করতে বলা হয়। এর আগের দিন গত মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) কারখানা খোলা ও ছুটির সময়ে ভিড় এড়ানোর জন্য শ্রমিকদের প্রবেশ ও বের হওয়ার ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারণে জোর দিতে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করেছে সংগঠনটি।
এদিকে প্রজ্ঞাপন জারির পর সরকারের নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করতে ওই দিনই শ্রম মন্ত্রণালয় তার অধীন শ্রম অধিদফতর এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরকে (ডিআইএফই) নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত নতুন রোগীর সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি। গত সোমবার (২৯ মার্চ) করোনা সংক্রমিত রোগী ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেলে মহামারির সংক্রমণ ঠেকাতে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এতে শিল্পকারখানা ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে পরিচালনার পাশাপাশি অন্তঃসত্ত্বা, অসুস্থ, ৫৫ বছরের বেশি বয়সের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাড়িতে রেখে কাজ করানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা আপাতত দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়।