জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের অপসারণ দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির সময় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বন্ধ রাখার অভিযোগে কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতির অভিযোগে আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের শুল্ক-২ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জারি করা প্রজ্ঞাপনটি স্বাক্ষর করেন বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খান।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে গত ২৮ ও ২৯ জুন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. জাকির হোসেন। এনবিআরের ১৮ জুনের এক আদেশে ওই দুই দিন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করসহ রাজস্ব খাতের সব দফতর খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কমিশনার সেই নির্দেশনা অমান্য করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ বন্ধ রাখেন, ফলে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়।
এই ঘটনায় সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৯(১) অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন। অভিযোগের প্রকৃতি, দায়িত্বে অবহেলার মাত্রা ও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ পর্যালোচনার ভিত্তিতে কমিশনারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু করা হচ্ছে।
এদিকে এনবিআরের চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে বলে জানা গেছে। এর আগে আন্দোলনরত ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ অনুসন্ধানের তথ্য প্রকাশ করে সংস্থাটি।
গত এক সপ্তাহ ধরে এনবিআরের ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগে চলছিল কর্মবিরতি ও কর্মসূচি। শনিবার (২৮ জুন) থেকে তা রূপ নেয় কমপ্লিট শাটডাউনে। ফলে দেশের রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সোমবার (৩০ জুন) সরকার এনবিআরের সেবা খাতকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দিয়ে কড়া বার্তা দেয়।
সেদিনই অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানান আন্দোলনকারীরা। পরে সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ উপদেষ্টার একটি মধ্যস্থতাকারী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
রবিবার রাতে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। এরপর মঙ্গলবার (১ জুলাই) থেকে কর্মকর্তারা কাজে যোগ দেন।
তবে আন্দোলন প্রত্যাহারের পরও বদলি, মামলা ও বিভাগীয় ব্যবস্থার আশঙ্কা রয়েই গেছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনারকে বরখাস্ত করার ঘটনায় সেই শঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের রাজস্ব আহরণে গাফিলতি কিংবা নির্দেশনা অমান্যকারী যেকোনও কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়ে প্রশাসনে জবাবদিহি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে সরকার। বিশেষ করে আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে যখন সরকার সচেষ্ট, তখন প্রশাসনিক উদাসীনতা কোনোভাবেই সহনীয় নয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দেশের প্রধান আমদানি-রফতানি বন্দরের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। এর কার্যক্রমে সামান্য বিঘ্নও জাতীয় অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে। এনবিআরের এই তড়িৎ পদক্ষেপ তাই প্রশাসনে দৃষ্টান্ত হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।