X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ

গোলাম মওলা
০৮ অক্টোবর ২০২১, ১১:০০আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২১, ১৩:০০

বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ই-কমার্স হঠাৎ করেই আস্থার সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে খুব অল্প সময়ে পরিচিতি পাওয়া ইভ্যালিসহ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎসহ গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করার ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ইভ্যালি ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের নামে পরিচালিত সব ধরনের হিসাবের তথ্য পাঠাতে হবে। ২০২০ সাল থেকে তাদের হালনাগাদ লেনদেনের বিবরণী, ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি জমা ও উত্তোলনের জমা রসিদ বা চেকের কপি (ওয়াক-ইন কাস্টমারের ছবিযুক্ত আইডিসহ) পাঠাতে হবে।

এসব হিসাবের নমিনির তথ্য এবং নমিনিদের নামে কোনও হিসাব থাকলে তাও জানাতে বলা হয়েছে। তাদের নামে এফডিআর, ঋণ হিসাব, এলসি থাকলে সব ধরনের কাগজপত্র, হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল, লেনদেন বিবরণী ও সংশ্লিষ্ট সবধরনের দলিল পাঠাতে বলা হয়।

এর আগেও গত বছর ইভ্যালির অ্যাকাউন্ট তলব এবং পরবর্তীতে ফ্রিজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ইভ্যালি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেলের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়।

ইভ্যালি গ্রাহকদের কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ নিয়েছে, তার চেয়ে অনেক কম সম্পদ থাকার তথ্য সামনে আসায় পুরো ই-কমার্স খাত আলোচনায় এসেছে। এরপর আলোচনায় আসে ই-অরেঞ্জের নাম। আগস্ট মাসের শেষের দিকে অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের চেয়ারম্যান সোনিয়া মেহজাবিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুকুর রহমানের ব্যাংক হিসাব তলব করার পর তাদের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এর আগে গত ৩০ জুন ধামাকা শপিং এর ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। পরবর্তীতে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৩০ জুন শুধু ধামাকা শপিংই নয়, আলিশা মার্ট, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, কিউকম, দালাল প্লাস, ই-অরেঞ্জ এবং বাজাজ কালেকশনসহ ১১টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করে বিএফআইইউ।

সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানি নিয়ে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে সিআইডিএ উদ্যোগ নেয়। সিআইডির চিঠির ভিত্তিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ) অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রাহকদের তথ্য দেওয়ার সুযোগ আছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউ’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। সম্প্রতি অন্তত ডজনখানেক ই-কমার্স কোম্পানির বিভিন্ন কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। তবে কতগুলো ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, তার পরিসংখ্যান দেননি তিনি।

এদিকে  ই-কমার্স প্রতারণায় অভিযুক্ত কিউকমের পেমেন্ট গেটওয়ে বা পরিশোধ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (পিএসও) ফস্টারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট  ফ্রিজ করেছে কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ। জানা গেছে, গত মাসের ৯ তারিখ প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টের লেনদেন স্থগিত করা হয়। মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুরোধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সূত্র মতে, ফস্টারের বড় গ্রাহক প্রতিষ্ঠান কিউকম। প্রতারণার দায়ে গত রবিবার (৩ অক্টোবর) কিউকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিপন মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অস্বাভাবিক ছাড়ে পণ্য বিক্রির নামে অর্থ সংগ্রহসহ বিভিন্ন অভিযোগে এর আগে গত জুনে যে ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকগুলো কার্ড লেনদেন স্থগিত করে তার মধ্যে কিউকম অন্যতম।

অবশ্য বেশ কয়েকটি ব্যাংক তাদের কার্ডের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কেনার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। পণ্য সরবরাহকারী বেশকিছু প্রতিষ্ঠানও এখন এসব কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জানা গেছে, শুরুতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে ‘অস্বাভাবিক’ সব অফার দেয়। পরে দেখা যায় যে, অগ্রিম অর্থ নিলেও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তারা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করছে না। ভোক্তাদের অভিযোগ— পণ্যের টাকা পরিশোধ করা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে তারা পণ্য পাচ্ছেন না। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য সরবরাহকারী বা মার্চেন্টরা বলছেন, দিনের পর দিন তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এর আগেও অবিশ্বাস্য অফার দেখিয়ে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।

/এপিএইচ/ইউএস/
সম্পর্কিত
ইভ্যালির রাসেলের জামিন বাতিল, গ্রেফতারি পরোয়ানা
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
সর্বশেষ খবর
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!