X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপসারণ হতে পারেন ফারমার্স ব্যাংকের এমডিও!

গোলাম মওলা
১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:১৩আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:১৮

 

এ কে এম শামীম ফারমার্স ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায় নিয়ে এবার অপসারণ হতে পারেন ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীম। তাকে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) এমডিদের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থায়ী কমিটিতে ডাকা হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর এ কে এম শামীমকে অপসারণে নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারা অনুযায়ী দেওয়া ওই নোটিশে সাত দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দিলেও তা সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে এই কমিটিতে ডাকা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংকের এমডিদের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থায়ী কমিটিতে যাদের ডাকা হয়, তাদের মূলত অপসারণের জন্যই ডাকা হয়। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ফারমার্স ব্যাংকের এমডি একেএম শামীমকে কমিটিতে ডাকা হয়েছে। তাকেও অপসারণ করা হতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর  আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংকে তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার জন্য ব্যাংকটির এমডিকে এর আগে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল বুধবার তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থায়ী কমিটিতে ডাকা হয়েছে। কমিটির সুপারিশের আলোকে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেকজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নতুন ঋণ বিতরণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি ফারমার্স ব্যাংকের এমডি একেএম শামীম। এ কারণে এমডিদের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থায়ী কমিটিতে তাকে ডাকা হয়েছে। কালই তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে, তাকে অপসারণ করা হতে পারে।’

প্রসঙ্গত, এর আগে একই প্রক্রিয়ায় গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) অপসারণ হয়েছিলেন এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমডি দেওয়ান মুজিবর রহমান, গত বছরের ৩০ জুন অপসারণ হয়েছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদ ও ২০১৪ সালের ২৫ মে অপসারণ করা হয়েছিল বেসিক ব্যাংকের এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে। 

এদিকে, ব্যাংকটিতে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে এহসান খসরুকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদ। তিনি এর আগে প্রাইম ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পর তার নিয়োগ কার্যকর করা হবে।

জানা গেছে, তারল্যসংকটে পড়ে নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকটি। এ ছাড়া গ্রাহকেরা চেক দিয়েও টাকা পাচ্ছেন না। এসব কারণে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমকে কেন অপসারণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ব্যাংকটিতে রাখা তাদের মেয়াদোত্তীর্ণ আমানত সুদাসলে তুলতে গেলে কয়েক দফায় চেক ডিজঅনার হওয়ার ঘটনা ঘটে।

এমন পরিস্থিতিতে ২৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারী হিসাব-সংক্রন্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতীকেও পদত্যাগ করতে হয়েছে।

একইভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে সম্প্রতি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন ইঞ্জিনিয়ার ফরাছত আলীও। তার স্থলে  তমাল এসএম পারভেজকে নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, রবিবার (১০ ডিসেম্বর) ব্যাংকটির পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড-এর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া নতুন ৯ ব্যাংকের একটি ফারমার্স ব্যাংক। ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর পরই ঋণ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে ব্যাংকটি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে ব্যাংকটির প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম ধরা পড়ে। গত সেপ্টেম্বর শেষে ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশই খেলাপি। মার্চ-জুন সময়ে ব্যাংকটি খেলাপি গ্রাহকদের থেকে মাত্র ৭ কোটি টাকা আদায় করেছে। শীর্ষ ১০ খেলাপি গ্রাহকের কাছেই ব্যাংকটির পাওনা ১৩৪ কোটি টাকা।

এদিকে, মূলধন সংকট কাটাতে ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমতি পেয়েছে ব্যাংকটি। সংকটে পড়া এই ব্যাংকটি বন্ড বিক্রি করতে পারলে তাদের মূলধন বাড়বে। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এই বন্ড বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে ব্যাংকটির। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক এর অনুমোদন দিয়েছে। বন্ডটির নাম দেওয়া হয়েছে দ্য ফারমার্স ব্যাংক প্রসপারেটি বন্ড-২০১৭।

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী