X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘গোল্ড এক্সচেঞ্জ’ গঠনে হতে পারে সমাধান

গোলাম মওলা
৩১ মার্চ ২০১৮, ১৫:২৯আপডেট : ৩১ মার্চ ২০১৮, ১৫:৫৬

বাংলাদেশের স্বর্ণবাজার শেষ পর্ব

দেশে স্বর্ণের চাহিদা মেটাতে আমদানি বিকল্প ‘গোল্ড এক্সচেঞ্জ’ গঠন হতে পারে সব সমস্যার সমাধান। স্বর্ণ সরাসরি মুদ্রায় রূপান্তরযোগ্য পণ্য হওয়ায় এটিকে ঢালাওভাবে আমদানির সুযোগ দিতে চায় না সরকার। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের মতো শুধুমাত্র স্বর্ণ লেনদেনের জন্য একটি পৃথক গোল্ড এক্সচেঞ্জ গঠন করতে পারলে বেশ কয়েকটি সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গোল্ড এক্সচেঞ্জ গঠন করা সম্ভব হলে স্বর্ণের সরবরাহ বাড়বে। এতে একদিকে স্বর্ণের দাম কমবে। অন্যদিকে, স্বর্ণের উৎস নিয়ে আর প্রশ্ন থাকবে না। একইসঙ্গে স্বর্ণ চোরাচালানও কমবে। 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো গোল্ড এক্সচেঞ্জ গঠন করা সম্ভব হলে সরকারের রাজস্বও বাড়বে। আবার স্বর্ণের উৎস নিয়ে যে ধোঁয়াশা রয়েছে, সেটাও কেটে যাবে।’ গোল্ড এক্সচেঞ্জ কীভাবে পরিচালিত হবে তার একটি রূপরেখাও দেন তিনি।

দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন,‘কোনও একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা হিসাব খুলবেন। বিষয়টি শেয়ারবাজারে লেনদেন করার জন্য বিও অ্যাকাউন্ট খোলার মতোই। তবে এটি করতে হলে গোল্ড ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ অথরিটি নামের কোনও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক এটিকে সুপারভিশন বা তদারকি করবে।’ তিনি আরও বলেন,‘ব্যবসায়ীরা গোল্ড অ্যাকাউন্টে আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রাখবেন। তারপর সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করলে স্বর্ণ কিনতে পারবেন। একইভাবে ব্যবসায়ীরা স্বর্ণ বেচতেও পারবেন। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এটি পরিচালিত হবে। দিনের বেলায় লেনদেন বা স্বর্ণ কেনাবেচার ক্ষেত্রে শর্ত থাকবে, সকাল ৬টার সময় আন্তর্জাতিক মার্কেটে বা লন্ডনের মার্কেটে যে দাম থাকবে, সেই দামেই কিনতে অথবা বিক্রি করতে হবে। আর রাতের বেলায় লেনদেন করতে হলে সন্ধ্যা ৬টার সময় আন্তর্জাতিক বাজারে বা লন্ডনের মার্কেটে যে দাম থাকবে সেই দামেই কেনাবেচা করতে হবে। এক বা একাধিক ব্যাংক এখানে ব্রোকার হাউজের কাজ করবে। স্বর্ণ কিলো গ্রাম বা আউন্স হিসেবে লেনদেন হতে পারে।’

দেওয়ান আমিনুল ইসলামের প্রস্তাবনা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন তার ভল্ট থেকে এই স্বর্ণ সরবরাহ করবে। তারপর দাম নির্ধারণ হবে। ওপেন মার্কেট থেকে যার যতটুকু স্বর্ণ দরকার সে কিনে নেবে। অথবা কেউ বিক্রি করতে চাইলে এই মার্কেটে বিক্রি করবে। এই কেনাবেচার ক্ষেত্রে একটা প্রিমিয়াম যোগ করতে হবে। যেটা গোল্ড মার্কেট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হবে। এই প্রিমিয়ামটা এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন মার্কেট চালু থাকে, আবার ব্যবসাও চলে। 

তিনি আরও বলেন, ‘এই মার্কেট পরিচালনার জন্য সরকারের বা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও টাকা দিতে হবে না। কেবল লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের টাকায় সব হবে। প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে রাখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপর ওই টাকার ভেতর থেকে চাহিদা অনুযায়ী স্বর্ণ সরবরাহ করবে। এভাবে এই মার্কেট চালু করা গেলে স্বর্ণশিল্প বড় হবে। সরকারের রাজস্বও বাড়বে। বাংলাদেশকে চোরাই স্বর্ণের রুট বলার অপবাদও দূর হবে।’

দেওয়ান আমিনুল ইসলামের সঙ্গে একমত বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগারওয়াল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৪৮ বছর ধরে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। এখন আমাদের বক্তব্য হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেরা স্বর্ণ এনে একটা প্রিমিয়াম যুক্ত করে ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করুক অথবা গোল্ড এক্সচেঞ্জ গঠনের মাধ্যমে সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকের সহায়তায় আমাদের কাছে স্বর্ণ সরবরাহ করুক। এটা বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেরা করতে পারে। আবার সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমেও করতে পারে।’ 

তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গোল্ড এক্সচেঞ্জ গঠনের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বর্ণ আমদানি ঢালাওভাবে করা ঠিক হবে না। আবার গোল্ড এক্সচেঞ্জ গঠনও ঠিক হবে না। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে না দেশের ব্যাংকিং কার্যক্রম বাদ দিয়ে স্বর্ণের তদারকি করা।’

এদিকে, স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়নে ফাইলের পর ফাইল চালাচালি হচ্ছে। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে তা আর হয়ে উঠছে না। এ অবস্থায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া স্বর্ণের বাজারে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দ্রুত করণীয় নির্ধারণের তাগিদ দিয়ে জানুয়ারি মাসে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসুকে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন। অবশ্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের সময় এ খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে একটি যুগোপযোগী ‘জাতীয় স্বর্ণ নীতিমালা’ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত বছর ডিসেম্বরেই এর একটি খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বিষয়টি কেবলই প্রলম্বিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  

যে কারণে স্বর্ণের নিলাম বন্ধ

৪৭ বছরেও নেই স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা, অপেক্ষার শেষ কবে?

যে কারণে চোরাই স্বর্ণ কিনতে চান ব্যবসায়ীরা 

স্বর্ণ আমদানিতে বাধা কোথায়?

 

 

/এএম/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা