X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে চোরাই স্বর্ণ কিনতে চান ব্যবসায়ীরা

গোলাম মওলা
২৮ মার্চ ২০১৮, ১১:০৪আপডেট : ২৯ মার্চ ২০১৮, ০৯:২৭

বাংলাদেশের স্বর্ণবাজার পর্ব-২ বাণিজ্যিকভাবে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ না নিয়ে অবৈধভাবে আসা চোরাই স্বর্ণ কিনতে চান ব্যবসায়ীরা। এ জন্য স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করা স্বর্ণ কেনার সুযোগ চাওয়া ছাড়াও স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের বিষয়টিকে বৈষম্যমূলক ও কালক্ষেপণকারী প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, অবৈধভাবে আসা স্বর্ণের চালান ধরা পড়ার পর তা জমা করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। এক্ষেত্রে মালিকবিহীন অবস্থায় স্বর্ণ ধরা পড়লে তা সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থায়ী খাতে জমা হয়।

 জানা গেছে, দেশের স্বর্ণের বাজারের প্রায় পুরোটাই চোরাচালান থেকে আসে। প্রতিবছর চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগই স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। বাকিটা ব্যাগেজ রুলসের আওতায় আনা স্বর্ণের মাধ্যমে পূরণ হয়।  

এক হিসাবে, দেশে বছরে স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টন। যদিও বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকারের মতে, স্বর্ণের চাহিদা ৭ থেকে ৮ টনের। এ চাহিদার পুরোটাই আমদানির মাধ্যমে পূরণ হওয়ার কথা।

এ প্রসঙ্গে গঙ্গাচরণ মালাকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘ব্যাগেজ রুলসের আওতায় কিছু স্বর্ণ বাইরে থেকে আসে। বাকি স্বর্ণ দেশের অভ্যন্তরের পুরনো স্বর্ণ দিয়েই সামাল দিতে হয়।’

স্বর্ণের চাহিদা থাকলেও আমদানি প্রক্রিয়া জটিল হওয়ার কারণে সরবরাহ কম। ফলে পণ্যটির দাম প্রায়ই বাড়াতে হয় উল্লেখ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার বলেন,‘নানা জটিলতার কারণে আমরা স্বর্ণ আমদানি করতে পারি না। কিন্তু বাজারে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা বাড়ার কারণে এর দামও বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে আমরা বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছি।’ তার মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকে পড়ে থাকা স্বর্ণ আমাদের কাছে বেচলে এই শিল্পের উপকার হবে। সরকারও বিশাল অঙ্কের নগদ অর্থ পাবে।

স্বর্ণের দোকান

বাজুসের চিঠিতে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আজ পর্যন্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্বর্ণ আমদানি করেনি। জুয়েলারি একটি প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও সঞ্চয়ের মাধ্যম হওয়ায় দেশে-বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে স্বর্ণ সম্পূর্ণ আমদানি-নির্ভর কাঁচামাল। বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৪৭ অনুযায়ী এলসির (লেটার অব ক্রেডিট) সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পরও এটি আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়, যা বৈষম্যমূলক এবং কালক্ষেপণকারী প্রক্রিয়া।

 এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক দেবাশিস চক্রবর্ত্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৪৭ অনুযায়ী যথাযথ নিয়ম মেনে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ আছে। কেউ যথাযথ নিয়ম মেনে এলসি করলে সেক্ষেত্রে জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক আপত্তি অথবা অনাপত্তি দেয়। এটাকে কোনোভাবে বৈষম্যমূলক ও কালক্ষেপণকারী বলা উচিত হবে না।’

বাজুসের চিঠিতে আরও বলা হয়,সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময় সংগ্রহ,জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করা বিশাল স্বর্ণের মজুত বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত আছে। ২০০৮ সালের ২৩ জুলাইয়ের পর কোনও নিলাম ডাকা হয়নি। মূলত এই মজুত কোনও উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না। দেশীয় বাজারের চাহিদা পূরণে এ স্বর্ণ বৈধ জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কাছে ন্যায্য দামে বেচলে সরকার বিশাল অঙ্কের অর্থ পাবে। একইসঙ্গে বৈধ জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা জটিলতার হাত থেকে রক্ষা পাবে। ওই চিঠিতে ইস্যুটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে শিগগির মজুত স্বর্ণ বিক্রির উদ্দেশ্যে নিলাম ডাকার অনুরোধ করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে হাজার হাজার টন স্বর্ণ পড়ে আছে। অথচ আমরা স্বর্ণ পাচ্ছি না। আবার নানা জটিলতায় আমদানিও করার সুযোগ নেই। এ কারণে অবৈধভাবে আসা চোরাই স্বর্ণ আমরা কিনে নিতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু গত মাসেই নয়, এর আগেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়ে আসছি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক কোনও সাড়া দিচ্ছে না।’

স্বর্ণের দোকান

অন্যদিকে টিআইবির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈধ পথে আমদানি না হওয়ায় স্বর্ণ সংশ্লিষ্ট এ খাত থেকে সরকারের বছরে রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে ৪৮৭ কোটি থেকে ৯৭৪ কোটি টাকা।

শুল্ক বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে দুই হাজার কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে। আর স্বাধীনতার পর থেকে অবৈধ উপায়ে আসা স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কেজি (বা ১২৫ মণের বেশি)। এর মধ্যে প্রায় ৬০ মণ স্বর্ণের মালিকের কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় মালিকানা ঝুলে আছে আরও প্রায় ৩০ মণের। তবে ১৫ কেজি স্বর্ণ আদালতের নির্দেশে শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে মালিকানা দাবি করা ব্যক্তিদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর কিছু বিক্রি করা হয়েছে নিলামের মাধ্যমে।

জানা গেছে, আশির দশকে এই দেশে চোরাচালানের মধ্যমে স্বর্ণ আসা শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে চোরাচালানের ৯৬ কেজি ৫২৫ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। ১৯৮৬ সালে উদ্ধার হয় ১২০ কেজি ২২৫ গ্রাম। ২০০৯ সালে শুধু বিমানবন্দরগুলো থেকে ১২ কেজি, ২০১০ সালে ৯ কেজি, ২০১১ সালে ৪ কেজি, ২০১২ সালে ২৪ কেজি, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চোরাইপথে আসা প্রায় ২৬ মণ স্বর্ণ আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বর্ণের চারাচালান ধরা পড়ে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। ওই বছরের ২৩ জুলাই নেপাল থেকে আসা একটি বিমান থেকে ১২৪ কেজি ২১৬ গ্রাম স্বর্ণ জব্দ করা হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চোরাচালান ধরা পড়ে ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল। এসব অবৈধ স্বর্ণ জব্দ করে কখনও শুল্ক বিভাগ, কখনও পুলিশ বা কখনও এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছে।

 

আগামীকাল পড়ুন:

স্বর্ণ আমদানিতে বাধা কোথায়?

 

 

 

/এইচআই/আপ-এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তোমার গানের ওপারে
তোমার গানের ওপারে
বার্নাব্যুতে আরেকটি জাদুকরী রাতের অপেক্ষায় রিয়াল মাদ্রিদ 
চ্যাম্পিয়নস লিগবার্নাব্যুতে আরেকটি জাদুকরী রাতের অপেক্ষায় রিয়াল মাদ্রিদ 
বিএসএফের গুলিতে ২ বাংলাদেশি নিহত, নিয়ে গেছে লাশ
বিএসএফের গুলিতে ২ বাংলাদেশি নিহত, নিয়ে গেছে লাশ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ৭ উপায়
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ৭ উপায়
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
ছুড়ে দেওয়া সব তির সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তির সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ