X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে সুবিধা দিয়েও হয়রানি!

সঞ্চিতা সীতু
২৯ মে ২০২০, ১০:০০আপডেট : ২৯ মে ২০২০, ২২:৫০

বিদ্যুৎ বিল করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে গ্রাহকদের তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল একসঙ্গে দেওয়ার সুবিধা দেয় সরকার। কিন্তু এখন সেই ঝুঁকিতেই ফেললো বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিমাসে যে পরিমাণ বিল আসে, গত এপ্রিল ও মে মাসে তার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিল করেছে শহুরে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। আর  গ্রামে প্রতিমাসে যে বিল আসে, তার সঙ্গে অতিরিক্ত ২০০ টাকা যোগ করে দেওয়া হয়েছে।

গ্রাহকরা বলছেন, আমরা তো সরকারের কাছে কোনও সুবিধা চাইনি। সরকার সাধারণ মানুষকে করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে স্বেচ্ছায় এই সুবিধা দিয়েছে। বিলম্ব মাশুল বাদ দেওয়ায় সবাই তিন মাসের বিল একসঙ্গে দেওয়ার সুবিধা পাচ্ছে। তাহলে এখন কেন অতিরিক্ত বিল করে সাধারণ গ্রাহকদের হয়রানি করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নও করেছেন গ্রাহকদের কেউ কেউ।

এদিকে বিতরণ কোম্পানিগুলো করোনার কারণে অনেক জায়গায় প্রিন্ট করা বিলের বদলে এসএমএস করে বিল পাঠাচ্ছে। যারা এ ধরনের এসএমএস  পেয়েছেন, তারা ব্যাংকে বিল দিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন। কারণ, ব্যাংক বলছে তারা এসএমএস’র বিল নেবে না। যদিও এসব গ্রাহককে মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে বিল দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিল পরিশোধের পর ফিরতি এসএমএস  সংরক্ষণ করে রাখার জন্যও বলা হচ্ছে।

বিতরণ কোম্পানির কোনও কোনও কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিলম্ব মাশুল থেকে বিতরণ কোম্পানি একটি বড় অঙ্কের টাকা আয় করে। কিন্তু সরকার মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বিলম্ব মাশুল মওকুফ করে দিয়েছে। এতে গ্রাহকরা তিন মাসের বিল একসঙ্গে দেওয়ার সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলোর আয় কমে গেছে। এছাড়া, তিন মাসের বিল একসঙ্গে দেওয়ার কথা থাকলেও অনেকে তা দিতে পারবেন না। এসব দিক বিবেচনা করেই বাড়তি বিল করা হয়েছে।

ধানমন্ডির বাসিন্দা রেজিনা সুলতানা জানান, গত মাসে (এপ্রিল) তার যে বিল এসেছে, মে মাসে এসেছে তার চেয়ে অনেক বেশি। মিটার রিডারও আসেনি। মিটার দেখলে বোঝা যেতো কীসের  ভিত্তিতে এই বিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই মাসে (মে) যদি আমি বাড়তি বিল দেই, আগামী মাসে সেটা কীভাবে সমন্বয় করবে। কিছুই স্পষ্ট না আমাদের কাছে। সুতরাং, বাধ্য হয়ে বিল পরিশোধ করেছি।’

মোহাম্মদপুরে বসবাসকারী রিয়াদ আহমেদ বলেন, ‘আমার বিল আসে সাধারণত মাসে গড়ে দেড় হাজার টাকা করে। চলতি মাসে বিল এসেছে তিন হাজার টাকা। কী করবো বুঝতে পারছি না। এখনকার পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ অফিসে যাওয়াটাও ঝুঁকির।’

কাকরাইলের বাসিন্দা রহিম শিকদার মোবাইলে বলেন, ‘আমি প্রতিমাসের বিল প্রতিমাসেই বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করি। এ মাসে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ বিল দ্বিগুণ আসায় বিপদে পড়েছি। এখন বলা হচ্ছে, পরের মাসে মিটার দেখে সমন্বয় করা হবে। অনলাইনে বিল দেওয়ার পর যদি পরের মাসে তা সমন্বয় করা না হয়, তাহলে আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য আরও বিপদ হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির  (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনার এই সময়ে আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে কাজ করে যাচ্ছি। তারপরেও কিছু কিছু এলাকা থেকে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অভিযোগ পাচ্ছি। করোনার কারণে আমাদের মিটার রিডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং নিতে পারছেন না। সে কারণে আগের মাসের বিল দেখে এপ্রিল মাসের গড় বিল করা হয়েছে। এতে যদি কোনও গ্রাহকের বিদ্যুতের বিল বেশি আসে, সেক্ষেত্রে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলেই ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দুইভাবে গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছি। এসএমএস পাঠিয়েছি সবাইকে। আর কাগজের বিল তৈরি করা হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে বিলি করা যায়নি।’

বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘তিন মাসের বিলম্ব মাশুল মওকুফ করা হয়েছে। অথচ এখন গ্রাহকদের অনেকেই তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছেন না। ফলে আমরাও বিপদের মধ্যে আছি। অনলাইনেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা যায়। ব্যাংকে যাওয়ার দরকার নেই।’ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে ডিপিডিসিকে আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কিছু কিছু অভিযোগ পাচ্ছি। আমাদের অনেক কর্মীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে এই সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে আগের মাসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রাক্কলিত বিল করা হয়েছে। ফলে এই বিল প্রকৃত ব্যবহারের চেয়ে কম বা বেশি হতে পারে, যা পরবর্তীতে আমরা মিটার দেখে সঠিক করবো। এতে আপনার আর্থিক কোনও ক্ষতি হবে না। যদি আপনি ব্যবহারের চেয়ে বেশি বিল পরিশোধ  করে থাকেন, তাহলে সেটি পরের মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। আমাদের কাজ হলো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকদের সন্তুষ্ট রাখা।’ 

বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে গ্রাহকদের একটি বার্তা পাঠানো হয়েছে। ওই বার্তায় বলা হয়, বর্তমান বিলের সঙ্গে গ্রাহকের প্রকৃত বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ কম বা বেশি, অথবা কোনও অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হলে পরবর্তী মাসের বিলের সঙ্গে তা সমন্বয় করা হবে। কোনও অবস্থাতেই ব্যবহৃত বিদ্যুতের বেশি বিল গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে না। কোনও প্রকার বিলম্ব মাশুল ছাড়াই ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিল আগামী ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করা যাবে বলেও ওই বার্তায় জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এদিকে ঢাকার বাইরের গ্রাহকরাও বিল নিয়ে একই ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নিনা ইয়াসমিন জানান, গত তিন মাস ধরে তার প্রতিমাসের বিলের সঙ্গে বাড়তি ২০০ টাকা যোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এখন কীভাবে এই সমস্যার সমাধান পাবেন, প্রশ্ন করেন তিনি।

নিনা ইয়াসমিনের প্রশ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে আরইবি চেয়ারম্যান মুইন উদ্দিন বলেন, ‘করোনার কারণে মিটার রিডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিল করতে পারছেন না। তাই গত বছরের এই সময়ের বিলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এ মাসে বিদ্যুৎ বিল করা হয়েছে। যদি কোনও গ্রাহক জানান যে তার বিল বেশি এসেছে— তাহলে অবশ্যই সেই বিল আমরা সমন্বয় করবো।’ ঢাকার বাইরের গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে একই কথা বলেন ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন এবং নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম।

/এসএনএস/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের দাবি ‘অযৌক্তিক’: ভারত
অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের দাবি ‘অযৌক্তিক’: ভারত
‘বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল, আ.লীগ তা ব্যর্থ করে দিয়েছে’
‘বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল, আ.লীগ তা ব্যর্থ করে দিয়েছে’
রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি, কমেছে তাপমাত্রা
রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি, কমেছে তাপমাত্রা
‘এখন দেখছি মরে গেলে লাশেরও নিরাপত্তা নেই’
কঙ্কাল চুরির পর বিক্ষুব্ধ স্বজন বললেন‘এখন দেখছি মরে গেলে লাশেরও নিরাপত্তা নেই’
সর্বাধিক পঠিত
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই