X
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
৩১ বৈশাখ ১৪৩১

সিমিন রহমানের নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে ট্রান্সকম গ্রুপ

গোলাম মওলা
১৪ অক্টোবর ২০২০, ১৭:০০আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২০, ২১:৩২

সিমিন রহমানের নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে ট্রান্সকম গ্রুপ

ঐতিহ্যবাহী ট্রান্সকম গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নতুন প্রজন্মের শিল্প উদ্যোক্তা সিমিন রহমান। তিনি প্রয়াত শিল্পপতি লতিফুর রহমানের মেয়ে। সিমিন রহমান ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন তার মা ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহনাজ রহমান। তিনি প্রয়াত লতিফুর রহমানের স্ত্রী। গত ১ জুলাই ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পপতি লতিফুর রহমান মারা যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরতে হয়েছে সিমিন রহমানকে। যদিও লতিফুর রহমান বেঁচে থাকা অবস্থায়ও সিমিন রহমান এ  প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তখন তিনি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন।  এছাড়া  সিমিন রহমান দীর্ঘদিন ধরে ট্রান্সকম গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড এবং ট্রান্সকম কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেডের এমডির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) একজন নির্বাহী সদস্য।

নতুন দায়িত্ব প্রসঙ্গে জানতে সিমিন রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।  প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদে আরও কয়েকজন পরিচালক রয়েছেন। সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করছেন। তবে নীতিনির্ধারণী সব বিষয়ে সিমিন রহমানকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে দেখা যায়। সিমিন রহমান সব সময় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সে কারণে তিনি মিডিয়ার সঙ্গে  কথা বলতে চান না।

লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান, মেয়ে সিমিন রহমান ছাড়াও  ট্রান্সকম গ্রুপ পরিচালনার সঙ্গে লতিফুর রহমানের আরেক মেয়ে শাজরেহ হক এবং ছেলে আরশাদ ওয়ালিউর রহমান ও ভাই সাইফুর রহমান রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম গ্রুপের রয়েছে ১৩০ বছরের ব্যবসায়িক ঐতিহ্য।  ওষুধ, ইলেকট্রনিকস, খাদ্য ও পানীয়, চা, ভোগ্যপণ্য, মিডিয়াসহ ৯টি খাতে তাদের ব্যবসা রয়েছে। ১৮ হাজারের বেশি মানুষ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।  জানা গেছে, লতিফুর রহমান ১৯৬৬ সালে চাঁদপুরে  তাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডব্লিউ রহমান জুট  মিলের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন। নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে রহমান পরিবারের মূল অর্থ উপার্জনকারী প্রতিষ্ঠান ডব্লিউ রহমান জুট মিল জাতীয়করণ হয়। এর পরের বছরই লতিফুর রহমান ট্রান্সকম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন।

জানা গেছে, ১৮৮৫ সাল থেকে চা আবাদের মধ্যদিয়ে তাদের ব্যবসায়িক অধ্যায়ের সূত্রপাত হয়। তবে তাদের ব্যবসা প্রসারিত হয় মূলত পাটের ব্যবসার মাধ্যমে। লতিফুর রহমানের দাদা খান বাহাদুর ওয়ালিউর রহমানের জন্ম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়া গ্রামে। ওয়ালিউর রহমান পরবর্তীতে চলে যান আসামের জলপাইগুড়িতে। ১৮৮৫ সালে সেখানে কিছু জমি কিনে চা-বাগান শুরু করেন তিনি। ব্রিটিশ মালিকানার বাইরে ওয়ালিউর রহমান ছিলেন প্রথম স্থানীয় চা বাগানের মালিক। লতিফুর রহমানের বাবা মুজিবুর রহমানের জন্ম জলপাইগুড়িতে। কলকাতায়  লেখাপড়া শেষে আসামের তেজপুরে ফিরে সেখানেই জমি কিনে তিনিও চা-বাগান তৈরি করেন। মুজিবুর রহমানও খান বাহাদুর উপাধি পান। দেশভাগের পর পুরো পরিবার চলে আসে ঢাকায়। সিলেটে নতুন করে চা-বাগান শুরু করে এই পরিবার। পাশাপাশি মুজিবুর রহমান পাটের ব্যবসাও শুরু করেন।  ভৈরব ও আশুগঞ্জ এলাকায়ও তখন পাটের ব্যবসা ছিল তাদের।

১৯৪৫ সালের ২৮ আগস্ট জলপাইগুড়িতে জন্ম নেওয়া লতিফুর রহমান তার বাবার সঙ্গে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আসেন ১৯৬৫ সালে। তখন তার বাবা চাঁদপুরে গড়ে তোলেন ডব্লিউ রহমান জুট মিল। ১৯৬৩ সালে মিলের কাজ শুরু হলেও উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৬ সালে। দেড় বছর কাজ শেখার পর বাবার প্রতিষ্ঠানে একজন নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন লতিফুর রহমান। ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে সরকার ব্যক্তি মালিকানাধীন কল-কারখানা জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন লতিফুর রহমানদের পারিবারিক জুট মিলটিও সরকার নিয়ে নেয়। সে সময় লতিফুর রহমান মতিঝিলে যে অফিসে বসতেন, সেটাও সরকারি হয়ে যায়। এরপর ব্যবসা বলতে তাদের ছিল কয়েকটি চা-বাগান। তখনও চা-বাগানগুলো  জাতীয়করণ হয়নি।

জানা যায়, ওই সময় লতিফুর রহমান আর্থিক সংকটে পড়েন। কোনও কোনও দিন তার হাতে নগদে ১০০/২০০ টাকাও থাকতো না। কিন্তু নিজের অন্তরে থাকা উদ্যোক্তা স্বভাব তার চোখ খুলে দেয়। ১৯৭২ সালে ফের সবকিছু নতুনভাবে শুরু করতে হয় তরুণ উদ্যোক্তা লতিফুর রহমানকে। শুরুতে মাত্র ৫০ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেন।  মাত্র পাঁচ জন স্টাফ নিয়ে  ট্রান্সকম গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। লতিফুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। তিনি দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশের বাজারে আন্তর্জাতিক ফাস্টফুড চেইন পিৎজা হাট ও কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন (কেএফসি) প্রচলনের জন্যও তিনি সমধিক পরিচিত। ব্যবসায়ে  নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড পান লতিফুর রহমান।

ট্রান্সকম গ্রুপের আওতাধীন কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. ট্রান্সকম বেভারেজ লিমিটেড

২. ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড

৩.  ট্রান্সকম ফুডস লিমিটেড

৪.  ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস লিমিটেড

৫. ট্রান্সকম কনজ্যুমার প্রডাক্ট লিমিটেড

৬. এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড

৭. মিডিয়া স্টার লিমিটেড

৮. বাংলাদেশ ল্যামপ্‌স লিমিটেড

৯. ট্রান্সকম ক্যাবল লিমিটেড

১০. মিডিয়াওয়ার্ল্ড লিমিটেড

১১. টি হোল্ডিংস লিমিটেড

১২. রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড

১৩. ট্রান্সক্রাফ্ট লিমিটেড

১৪. বাংলাদেশ ইলেকট্রিকাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড

 

/এপিএইচ/আপ-এনএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘আমাদের ছাড়াতে এয়ারক্রাফটের মাধ্যমে মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছিল’
‘আমাদের ছাড়াতে এয়ারক্রাফটের মাধ্যমে মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছিল’
লিগ্যাল এইড পরিচালনায় অসামঞ্জস্য তুলে ধরলেন প্রধান বিচারপতি
লিগ্যাল এইড পরিচালনায় অসামঞ্জস্য তুলে ধরলেন প্রধান বিচারপতি
ডিআইইউ’তে বুধবার জেএমসি মিডিয়া বাজের পঞ্চম আসর
ডিআইইউ’তে বুধবার জেএমসি মিডিয়া বাজের পঞ্চম আসর
কোহলির রেকর্ড ভেঙে পাকিস্তানকে সিরিজ জেতালেন বাবর
কোহলির রেকর্ড ভেঙে পাকিস্তানকে সিরিজ জেতালেন বাবর
সর্বাধিক পঠিত
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল
শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সজনে পাতা খেলে মিলবে এই ১২ উপকারিতা
সজনে পাতা খেলে মিলবে এই ১২ উপকারিতা
রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ
রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ
সাকিব-তামিমের কারণে দলের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে: ইমরুল 
সাকিব-তামিমের কারণে দলের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে: ইমরুল