X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিবিধ চেষ্টার পরও পতন থামছে না শেয়ার বাজারে

গোলাম মওলা
২৭ মে ২০২২, ১৮:৪৮আপডেট : ২৭ মে ২০২২, ১৮:৫১

দেশের শেয়ার বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা দরপতন চলছে। চার সপ্তাহের টানা পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ প্রধান মূল্যসূচক হারিয়েছে ৪২৩ পয়েন্ট। অব্যাহতভাবে চলতে থাকা সূচকের পতনের পাশাপাশি বাজারে লেনদেনেরও খরা চলছে। যেন পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের শেয়ার বাজার। যদিও পতন থেকে এই বাজারকে ফেরাতে নানার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।

এই পতন ঠেকাতে ২২ মে প্রথমে শেয়ারের বিপরীতে ঋণসীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে এখন বিনিয়োগকারীরা নিজে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করলে তার বিপরীতে ১০০ টাকা ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন। আগে নিজের ১০০ টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে একজন বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ৮০ টাকা ঋণ নিতে পারতেন। এ ছাড়া ২৩ মে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন এক সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও শেয়ারে বিনিয়োগের আগে সেকেন্ডারি বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়।

বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনও আইপিওর শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক কোটা সুবিধা পেতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম তিন কোটি টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। এ ছাড়া গত সপ্তাহের শুরুতে প্রাক-লেনদেন সুবিধাও তুলে নেওয়া হয় পতন ঠিকাতে। এসব সিদ্ধান্তের পরও বাজারে দরপতন চলছে। এ অবস্থায় এসে বুধবার (২৫ মে) নতুন করে আবারও শেয়ারের দরপতনের সীমা কমানো হয়েছে। অর্থাৎ সূচকের পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের দরপতনের সীমা (সার্কিট ব্রেকার) কমিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনও প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম একদিনে ২ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বুধবার পর্যন্ত দরপতনের সর্বোচ্চ এ সীমা ছিল ৫ শতাংশ।

বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, এর আগে গত ৮ মার্চ বাজারের পতন ঠেকাতে শেয়ারের দরপতনের ওপর ২ শতাংশ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তার আগে শেয়ারের দাম এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমতে পারতো। সেই সীমা কমিয়ে ৮ মার্চ ২ শতাংশ করা হয়। এরপর ২০ এপ্রিল এ সীমা বাড়িয়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়।

এদিকে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসই দরপতনের মধ্য দিয়ে পার হয়েছে। এতে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার ২ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৯ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গেলো সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছিল ২১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৬১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৫টির। আর ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে গত সপ্তাহে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স কমেছে ২০ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৩০৭ দশমিক ২২ পয়েন্ট। তার আগের দুই সপ্তাহে কমেছিল ৯০ দশমিক ২০ পয়েন্ট  এবং ৬ দশমিক ৭০ পয়েন্ট। অর্থাৎ চার সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক হারিয়েছে ৪২৩ পয়েন্ট।

এদিকে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও টানা চার সপ্তাহ ধরেই পতনের ধারায় রয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৯ দশমিক ২৯ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৯০ দশমিক ২৪ পয়েন্ট। তার আগের দুই সপ্তাহে কমেছিল ৫৩ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট এবং ১৭ দশমিক ৩১ পয়েন্ট। অর্থাৎ চার সপ্তাহের টানা পতনে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচকটি কমেছে ১৭১ পয়েন্ট।

ইসলামি শরিয়ার ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও টানা চার সপ্তাহ কমেছে। গত সপ্তাহেও এই সূচকটি কমেছে ৯ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৪৯ দশমিক ১৩ পয়েন্ট। তার আগের দুই সপ্তাহে কমেছিল ১৪ দশমিক ৮১ পয়েন্ট এবং ১৭ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ চার সপ্তাহের পতনে এই সূচকটি কমেছে ৯০ পয়েন্ট।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬১০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতি দিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৮০৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৯৮ কোটি ৯ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৫৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ২৩৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ২ হাজার ১৮১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩০ কোটি ৫১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
৯ মাসে ওয়ালটনের মুনাফা বেড়েছে ৫১২ কোটি টাকা
‘গুজবে’ কান না দেওয়ার অনুরোধ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার
‘ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ হতে পারে বিনিয়োগের ভালো অপশন’
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা