ব্যাংকিং একটি সেনসেটিভ খাত। এই সেক্টরে একটি ছোট ভুল তথ্যও বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। ব্যাংকের প্রকৃত মালিক আমানতকারীরা। তাই মানুষ বিভ্রান্ত হয়—এমন কোনও সংবাদ প্রকাশ না করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা
রবিবার (১১ ডিসেম্বর) বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজে সম্প্রচারিত ও বাংলা ট্রিবিউন আয়োজিত ‘ব্যাংকের প্রতি অনাস্থায় ক্ষতি কার?’ শীর্ষক বৈঠকিতে তারা এই আহ্বান করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা।
ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকের আসলে কোনও ঘাটতি নেই, যা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে। প্রতিটি ব্যাংকই একটা নিয়মের মধ্যে কাজ করে। শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর প্রধান শক্তি হচ্ছে মানুষের ভালোবাসা ও বিশ্বাস। এটাই আমাদের বড় মূলধন।’
তিনি বলেন, ‘সবসময় মানুষ দুর্বল জায়গাটা খুঁজে নেয়। দেশের ও বৈশ্বিক সবকিছুর ওপর নির্ভর করে আমার ব্যাংকিং ব্যবস্থা। অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলে ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হবে। এগুলোর অবস্থা ভালো হলে ব্যাংকের অবস্থা ভালো হবে। ব্যাংকের যে লাভ-ক্ষতি নাই, তা কখনও বলবো না আমরা। আমি বলবো, এগুলো কুৎসা রটনা। আমি বলবো, আমরা যেই ব্যাংকগুলো (ঋণ) দিয়ে থাকি, তা নিয়ম অনুযায়ী দিয়ে থাকি।’
প্রকাশিত খবরের কারণে কোনও ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয়নি মন্তব্য করে ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে যারা একটু আতঙ্কিত হয়েছিল, তারা টাকা তুলে নিয়ে গেছে। আবার কিছু দিন পর সেই টাকাই ব্যাংকে জমা করে গেছেন। ওভার অল আমাদের কয়েক দিনের প্রভাব পড়েছিল।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, ‘ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ডকে একটা কথা মনে রাখতে হবে, তাদের কাজ হলো আমানতকারীদের একটা স্বার্থ রক্ষা করা। বোর্ডে থেকে টপ ম্যানেজমেন্টের বড় দায়িত্ব হলো—যে সিদ্ধান্তগুলো নিই না কেন, মাইনরিটি ওনার যারা বোর্ড এ আছেন। অর্থাৎ শেয়ার হোল্ডাররা তাদের স্বার্থ যেমন দেখবো, তার চেয়ে বড় স্বার্থ দেখবো সাধারণ আমানতকারীদের। এক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটলে এটাও একটা দায়িত্বহীনতা। তাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে যে তারা মাইনরিটি থেকে আমানতকারীদের বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এর মানে দেশের স্বার্থ দেখা।’
তিনি বলেন, ‘এটা আমরা চাই, মিডিয়ায় জোরেশোরে প্রচার হোক। বিশ্বাসটা ফিরিয়ে আনার জন্য সেন্ট্রাল ব্যাংকের বড় ভূমিকা ছিল। আমানতকারীরা দেখেছে—সেন্ট্রাল ব্যাংক দাঁড়িয়ে আছে, পলিসি মেকাররা দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া প্রকাশিত ঘটনাটা কতটা সত্য, তা যাচাই করার জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে। সুতরাং, তার যে ফলাফল তা যেন আমরা আমানতকারীদের জানাই। এটাও সাধারণত মানুষের কাছে একটা দায়বদ্ধতা।’
আহসান হাবীব বলেন, ‘একটা বিষয় আমি সার্বিকভাবে চাইবো মিডিয়াতে, এটা আসুক আমানতকারীরা ব্যাংকের সত্যিকারের মালিক। আর কিছু শব্দ ব্যবহার বন্ধ করে দেই যে বেসরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক না বলে বেসরকারি খাতে পরিচালিত ব্যাংক বলতে হবে। সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক না বলে সরকারি খাতে পরিচালিত ব্যাংক। কারণ, ব্যাংকের মালিক কিন্তু সাধারণ মানুষ।’
বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি গোলাম মওলা বলেন, ‘দেশের ব্যাংকগুলোকে তদারকি করার দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি যদি মানুষের আস্থা থাকে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যা বলবে মানুষ তা-ই বিশ্বাস করবে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মাঝে যদি কোনও অনাস্থার জায়গা থেকে থাকে, সেটা নিয়ে কাজ করা। বাংলাদেশ ব্যাংক যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তাহলে আমাদের জন্য সাংবাদিকতা করাটা আরও সহজ হবে। তখন সাংবাদিকরা যে তথ্য লিখবে, তাতে সঠিক চিত্রই উঠে আসবে।’
আরও পড়ুন:
‘ব্যাংকিং ব্যবস্থা চুরমার করতে ইসলামী ব্যাংক নিয়ে প্রচার হচ্ছে’