ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) থেকে দাম বেঁধে দেওয়ার কারণে ডলারের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এই মডেল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাই একবারে না পারলেও আস্তে আস্তে বৈদেশিক মুদ্রার দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অংশ নিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন জাহিদ হোসেন। এছাড়াও ঋণ সুদহার ক্রমান্বয়ে বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণপূর্বক তা সংরক্ষণের নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নীতি সুদহার একক বিনিময় হার, অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় সাশ্রয়ের উল্লেখপূর্বক ভবিষ্যতে সময়োপযোগী নীতি উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি তাকে অবহিত করা হয়।
বৈঠক শেষে ড. জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘চলমান অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানানো হয়। সামনে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, এ বিষয়ে আমাদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়। আমরা সবাই জানি চ্যালেঞ্জগুলো কী। ঋণের সুদের হার, ডলার মার্কেটে অস্থিরতা এবং ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ এখন সবচেয়ে বড় বোঝা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী নীতির আরও পরিবর্তন আসতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলমান অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে তিনটি জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে— সুদহারের নীতি, বৈদেশিক মুদ্রার দর ও দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ কমানো। এর মধ্যে আমরা কিছু পরামর্শ দিয়েছি, তা হলো— এবিবি ও বাফেদার পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
এর আগে গত সোমবার (২৩ অক্টোবর) গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে সংস্থাটি জানায়, ডলার সংকট নিরসনে সম্প্রতি নেওয়া রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দীর্ঘ মেয়াদি সুফল আসবে না। ডলার রেট পুরোপুরি বাজারের ওেপর ছেড়ে দিতে হবে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অর্থপাচার হচ্ছে। অর্থপাচার বন্ধ না হলে রেমিট্যান্স বাড়বে না। যারা অর্থপাচার করছে তাদের তথ্য কি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নেই?’
এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, কারা পাচার করছে তাদের আইডেন্টিফাই করা যায়। তবে তথ্য প্রমাণ না থাকায় আইনের আওতায় আনা যায় না।
এ বিষয়ে আমরা (সানেম) দ্বিমত প্রকাশ করেছি, কারণ যদি পাচারকারীদের আইডেন্টিফাই করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের যে বিশেষ সংস্থা আছে, তারা যদি ইচ্ছে করে পাচারকারীদের তথ্য প্রমাণ বের করা কঠিন হওয়ার কথা না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জোর দিয়েছি। কারণ অর্থপাচার বন্ধ না হলে রেমিট্যান্স বাড়বে না।
এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে একই বিষয়ে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দেন। পরবর্তীকালে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানের সঙ্গেও বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।