X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত সংগ্রহ করবে কীভাবে?

গোলাম মওলা
২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:১৩আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:১৩

সদ্য পাস হওয়া ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন- ২০২৩’-এ কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ, যৌথ নামে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা, কিংবা মাঝে মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার বেশি আমানত সংগ্রহের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আইনের এ ধারা নিয়ে অনেকের মাঝে উদ্বেগ রয়েছে। ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) মালিকদের পাশাপাশি গ্রাহকরাও রয়েছেন ধোঁয়াশার মধ্যে।

এ নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে  ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক  প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) বৈঠক করেছেন। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, এনবিএফআই খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি দেখা হবে। একইসঙ্গে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমানতের সীমায় ছাড় দেওয়া হবে।

আইন কার্যকরের দুই বছরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিষয়টি নিয়েও ওই সভায় আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত আরও এক বছর সময় দেওয়া হতে পারে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আশ্বাস মিলেছে। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য ছাড় দেওয়া যায় কিনা, সেটিও বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফাইন্যান্স কোম্পানিজ (বিএএফসি) ও মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে আইনটিকে ইতিবাচকভাবে আমরা দেখতে পারি। নতুন আইনে আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়নি।’ তিনি উল্লেখ করেন, এত দিন আমরা যেভাবে আমানত সংগ্রহ করেছি, এখনও সেভাবেই করা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘তবে  আমানত গ্রহণের ক্ষেত্রে আইনে ৫০ লাখ টাকার যে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তার ভবিষ্যৎ প্রভাব কী হতে পারে, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তা তুলে ধরেছি।’

কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন এনবিএফআই খাতে কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। ভালো প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতি করা আইনের উদ্দেশ্য নয়, বরং আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে— তুলনামূলক দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ঘুরে দাঁড়িয়ে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি জানান, ৫০ লাখ টাকার সীমা বেঁধে দেওয়ার  বিষয়টি প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করবে, সে বিষয়ে অচিরেই বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ করে আইন প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। তাই এটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। তবে আইনের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সেটির বিষয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘আইনটি হাতে পাওয়ার পর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এর প্রভাব কী হবে— সবকিছু পর্যালোচনা করে এনবিএফআই খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং সে ধরনের উপযোগী নীতিমালা ও বিধি তৈরি করা হবে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনবিএফআই খাতকে দুর্বল রেখে দেশের অর্থনীতি এগোতে পারবে না। এক্ষেত্রে আমানতকারীদের নিরাপত্তা ও ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ, একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে ওই বৈঠকে এনবিএফআইয়ের আমানতের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি ঋণের বিপরীতে জামানত, পরিচালকদের মেয়াদ, সম্পর্কিত পক্ষের শেয়ার ধারণের সর্বোচ্চ সীমা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকার মতো বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এনবিএফআইগুলোর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এসব বিষয়ে তাদের উদ্বেগ ও মতামত তুলে ধরেন। 

জামানতবিহীন ঋণের বিষয়ে নতুন আইনে বলা হয়েছে—  কোনও ফাইন্যান্স কোম্পানি কোনও ব্যক্তিকে ১০ লাখ টাকা, কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত পরিমাণের বেশি জামানতবিহীন ঋণ দিতে পারবে না। তবে কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের ক্ষেত্রে (সিএমএসএমই) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। এ বিষয়টিও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তুলে ধরেছে। এক্ষেত্রে সম্প্রতি অনুমোদন করা ‘সিকিউরড ট্রানজেকশন (মুভেবল অ্যাসেট) আইন ২০২৩’ আমলে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে নতুন আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে সমস্যায় পড়তে হতো, সেটির সমাধান হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, নতুন ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের গেজেট আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে এখনও আসেনি। সেটি আসার পর পর্যালোচনা করে দেখা হবে যে, আইনটি বাস্তবায়ন করা হলে এ খাতের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের ক্ষেত্রে (সিএমএসএমই) এনবিএফআইয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়।  ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনবিএফআই হলো এক ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যারা সম্পূর্ণ ব্যাংকিং লাইসেন্স পায় না, বা কোনও জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় না। এনবিএফআই মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ বা বিনিয়োগসেবা প্রদান করে। তবে ব্যাংকের মতো চাহিদা অনুযায়ী আমানত সংগ্রহ করতে পারে না এবং চাহিবামাত্র আমানতের অর্থ গ্রাহককে ফেরত দিতে পারে না। কারণ, এখানে ক্যাশ বা নগদ কাউন্টার সুবিধা নেই। তাই এই প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়াদপূর্তিতে বা নির্দিষ্ট সময় পর আমানত পরিশোধ করে থাকে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির আওতায় দেশের আর্থিক খাতের সংস্কারে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার শর্ত দেয় সংস্থাটি। এর মধ্যে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন  প্রণয়নের বিষয়টিও ছিল। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইনটি পাস করার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। যদিও এটি গত ১ নভেম্বর পাস হয়েছে।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না: সালেহউদ্দিন আহমেদ
সরকারের ১০০ দিনে নানা চ্যালেঞ্জ
ড. মাহবুব উল্লাহর ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’ বইয়ের পাঠ উন্মোচন 
সর্বশেষ খবর
‘জেসিকে দেখে কর্মকর্তারা নাখোশ ছিল, ক্রিকেটারদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই’
‘জেসিকে দেখে কর্মকর্তারা নাখোশ ছিল, ক্রিকেটারদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই’
সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
জিপি এক্সিলারেটর বুটক্যাম্প শুরু
জিপি এক্সিলারেটর বুটক্যাম্প শুরু
শ্রমজীবী মানুষের মাঝে স্যালাইন ও পানি বিতরণ মহানগর আ. লীগ নেতার
শ্রমজীবী মানুষের মাঝে স্যালাইন ও পানি বিতরণ মহানগর আ. লীগ নেতার
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে