X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
সাক্ষাৎকারে অ্যাসিড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি

‘মোড়ক উম্মোচনের নামে হয়রানি বন্ধ হোক’

শফিকুল ইসলাম
৩১ মার্চ ২০১৬, ১৫:৩৪আপডেট : ৩১ মার্চ ২০১৬, ১৫:৩৮

হারুন আল রশিদ আমদানিকৃত অ্যাসিড বন্দর থেকে খালাস করার পর গুদামজাত করতে হয়। এরপর যে এলাকায় গুদাম সেই জেলার সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উম্মোচন না করা পর্যন্ত বিক্রি করা যায় না। এটিই নিয়ম ও আনুষ্ঠানিকতা। আর জেলা প্রশাসক কর্তৃক মোড়ক উম্মোচন করানোর জন্য আবেদন জমা দিলেও ম্যাজিস্ট্রেট পেতে ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় চলে যায়। এ সময়ের মধ্যে আমদানিকৃত অ্যাসিড বিক্রি বন্ধ রাখতে হয়। পরে ম্যাজিস্ট্রেট এসে মোড়ক উম্মোচনের নামে বিক্রির অনুমতি দিয়ে একটি ছাড়পত্র দেন। তার পরেই কেবল অ্যাসিড বিক্রি করা যায়। এতে একদিকে  যেমন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। অন্যদিকে অ্যাসিড ব্যবহারকারী যথাসময়ে অ্যাসিড না পাওয়ায় শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যহত হয়। তাই আমদানিকৃত অ্যাসিড চট্টগ্রাম বন্দরে কাস্টমস কর্তৃক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে যদি গুদামজাত করা এবং ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে আমদানিকৃত অ্যাসিডের ড্রামের মুখ খোলা এবং ছাড়পত্র গ্রহণের আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকতো তাহলে আমদানিকারকগণ তাদের পণ্য নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম বা তার আশপাশের জেলায় বিক্রি করতে পারতেন।

বর্তমানে মোড়ক উম্মোচনের নামে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ছাড়পত্র গ্রহণে বাধ্যবাধকতা থাকায় অ্যাসিড চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় এনে তা গুদামজাত করার পর ম্যাজিস্ট্রেটের ছাড়পত্র গ্রহণ শেষে তা আবার নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম বা আশপাশের জেলা সমূহের ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে পরিবহন খরচ অনেকগুণ বেড়ে যায়। এতে পণ্যেরও মূল্য দাম বেড়ে যায়।

এ ছাড়াও অ্যাসিডের মতো স্পর্শকাতর পণ্য লোড -আনলোড করা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আইনের এই বাধ্যবাধতাকে এক প্রকার হয়রানি বলে মনে করেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তাই এটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসিড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-আল-রশিদ। বুধবার দুপুরে রাজধানীর আরমানিটোলাস্থ অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে বাংলা ট্র্রিবিউনের এই প্রতিনিধির সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এ সব সমস্যার কথা তুলে ধরেন হারুন-আল-রশিদ।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, আইনের কঠোরতা বেড়েছে। বেড়েছে সামাজিক আন্দোলন। সমাজে সচেতনতাও বেড়েছে। এর প্রেক্ষিতে অ্যাসিড সন্ত্রাস আগের তুলনায় অনেক কমেছে। এই অ্যাসিড সন্ত্রাস ঠেকাতে সরকার অ্যাসিডের আমদানি, মজুদ তা বাজারজাতকরণ কঠোর করেছে। এতে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে যে সকল শিল্পে অ্যাসিড ব্যবহার করা হয় সেই সকল শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হয়।

অ্যাসিড যাতে সহজলভ্য না হয় সেজন্যই তো অ্যাসিড বিক্রি, মজুদ ও বাজারজাতকরণের আইন কঠিন করা হয়েছে, বাংলা ট্রিবিউনের এমন মন্তব্যের জবাবে হারুন-আল-রশিদ জানান, আমদানিকৃত অ্যাসিড দিয়ে সন্ত্রাস হয় না। এটি সহজলভ্য নয়। সুলভেও পাওয়া যায় না। যে অ্যাসিড মানুষের শরীরে ছোড়া হয় তার নাম সালফিউরিক অ্যাসিড, যা দেশে উৎপাদিত হয়। এ আইন দিয়ে ওই অ্যাসিড উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ ঠেকানো যায় না বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।

একান্ত আলাপকালে বিবিধ সমস্যার কথা উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র নিয়ে আমরা অ্যাসিড আমদানি করি। এর পরেও যদি বাজারজাতকরণে এতো কঠোরতা থাকে তাহলে ব্যবসা চলবে কীভাবে ?

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশে অ্যাসিড আমদানিকারক আপনারা কতোজন?

হারুন-আল-রশিদ: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিকতর যাচাই বাছাই শেষে ১৬ কোটি মানুষের এই বাংলাদেশে আমরা অ্যাসিড আমদানিকারক মাত্র ৭ থেকে ৮ জন।

বাংলা ট্রিবিউন:ডিলার কতোজন?

হারুন-আল-রশিদ:  সারাদেশে অ্যাসিড বিক্রির জন্য সরকার মনোনীত ডিলারের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ৩০০ জন।

বাংলা ট্রিবিউন:  বাংলাদেশে অ্যাসিডের চাহিদার পরিমাণ কতো ?

হারুন-আল-রশিদ: এখানে একটা ঘাপলা আছে। দেশে অ্যাসিডের চাহিদার পরিমাণ আমাদের জানা নাই। কারণ, আমরা ৭/৮ জন আমদানিকারকের বাইরেও দেশে সালফিউরিক অ্যাসিড উৎপাদিত হয়। তার পরিমাণ আমরা জানি না। তাছাড়া, আমরা ৭/৮ জন আমদানিকারক কে কতো পরিমাণ অ্যাসিড আমদানি করি তারও কোনও তথ্য আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের কাছে থাকে না। এর জন্য আমরা সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব দিয়েছি, আর তা হলো- আমদানিকৃত অ্যাসিড বিক্রির তথ্য যেন আমদানিকারকরা অ্যাসোসিয়েশনে দেয়। তাহলে দেশে বার্ষিক অ্যাসিডের চাহিদার একটি হিসাব পাওয়া যাবে।   

বাংলা ট্রিবিউন: অ্যাসিড এক প্রকার দাহ্য পদার্থ। তাই অ্যাসিড পরিবহনে কোনও জটিলতা রয়েছে কিনা ?  

হারুন-আল-রশিদ:দেশের অভ্যন্তরে অ্যাসিড পরিবহন এটি গুরুতর সমস্যা। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশের হয়রানি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যখন আমরা অ্যাসিড আমদানির লাইসেন্সের জন্য আবেদন করি, তখন অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এর মধ্যে একটি কাগজ হচ্ছে, আমি যে ট্রাকে করে বা পিকআপে করে অ্যাসিড পরিবহন করবো সেই ট্রাক বা পিকআপের চালকের লাইসেন্সসহ গাড়ির সমস্ত কাগজপত্র। এখন যে ক্রেতা ১০০ কেজি অ্যাসিড কিনবেন তিনি তো ট্রাক বা পিকআপে নেবেন না। তিনি হয়তো রিকসা বা ঠেলাগাড়িতে পরিবহন করবেন। ২০০ কেজি অ্যাসিড যিনি পরিবহন করবেন তিনি হয়তো ভ্যানে পরিবহন করবেন। আবার বরিশালের গ্রাহকরা হয়তো লঞ্চে করে পরিবহন করবেন। কিন্তু পুলিশ এগুলো মানতে নারাজ। রিকশা, ঠেলাগাড়ি, ভ্যান বা লঞ্চে অ্যাসিড পেলেই তারা হয়রানি করে। এর জন্যই আমরা আমদানির ৮ নাম্বার শর্তটি  বাতিলের জন্য আবেদন জানিয়েছি।

বাংলা ট্রিবিউন: অ্যাসিড আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্স সম্পর্কে বলুন।

হারুন-আল-রশিদ:  আগে আমরা বছরে ১৪ হাজার টাকা প্যাকেজ ভ্যাট দিতাম। ঝামেলা এড়াতে এই পরিমাণ বাড়ালেও আমরা দিতাম। কোনও সমস্যা হতো না।  কারণ, প্যাকেজ ব্যতিরেকে ভ্যাট ট্যাক্স দিতে অনেক কাগজপত্র লেখালেখি করতে হয়, ঝামেলা পোহাতে হয়। এই সেক্টরে অনেকেই আছেন যারা তেমন লেখাপড়া জানেন না। তাই যতো পরিমাণই হোক ঝামেলা এড়াতে প্যাকেজ ভ্যাটই তাদের কাছে বেটার। কিন্তু এবার বোধ হয় এই সিস্টেমটা উঠে যাবে। রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা এই প্যাকেজ ভ্যাট সিস্টম মানতে নারাজ।   

১৯৫৫ সালের ১ নভেম্বর কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া হারুন-আল-রশিদ ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে মুরাদনগর আওয়ামী লীগের সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করছেন।  পেশিশক্তির অনুপ্রবেশের কারণে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চাইলেও দল তাকে ছাড়ছে না। পরপর তিন মেয়াদে ৬ বছর যাবত  অ্যাসিড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মুরাদনগর যাত্রাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদেরও সভাপতি।  ৪ পুত্র সন্তানের জনক হারুন-আল-রশিদ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়েরও সদস্য। অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে নির্বাচিত এই ব্যবসায়ীর কোনও উচ্চাকাঙ্খাও নেই। কোনও নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহ ও তা ঘর মসজিদ ছাড়া আর কোনও ঘর আমাকে তেমন টানে না।


/এসআই/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
তামাকে বিষ, তবুও ঝুঁকছেন কৃষক 
তামাকে বিষ, তবুও ঝুঁকছেন কৃষক 
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা বিলে ভোট আজ
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা বিলে ভোট আজ
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা