X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুই সিদ্ধান্তে চাঙা হলো শেয়ার বাজার

গোলাম মওলা
০৫ আগস্ট ২০২২, ১৮:৪৫আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২২, ১৮:৪৫

ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার পর উন্নতি হয়েছে শেয়ার বাজারের। এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কারণে শেয়ার বাজার এখন চাঙা হয়ে উঠেছে। এত দিন ধরে শেয়ার বাজারে যেসব নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারী ছিলেন, তারা আবারও সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। এতে করে বাজারে বাড়ছে লেনদেন। বাজারের পতন ঠেকাতে গত রবিবার থেকে শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর পর থেকে বাজারে সক্রিয় হতে শুরু করেন নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা। এতে শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও।

এদিকে শেয়ার বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিটের হিসাব হবে শেয়ারের ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নতুন এ নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

এই নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ২৬-ক উপধারা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ধারণকৃত শেয়ারের ক্রয়মূল্যকে ‘বাজারমূল্য’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। শেয়ার, করপোরেট বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ড ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নিদর্শনপত্রের বাজারমূল্য হিসাবায়নের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।

এর আগে ২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ শেয়ারের ক্রয়মূল্যকে ‘বাজারমূল্য’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মতামত দেয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সেই মতামত পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এর আগে ২০১০ সালের ধসের পর থেকে শেয়ার বাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট হিসাবের ক্ষেত্রে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকে বাজারমূল্য হিসেবে বিবেচনার দাবি করে আসছিলেন শেয়ার বাজারের–সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে এ নিয়ে আলোচনা চললেও সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি।

গত ১২ জুলাই নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সাবেক অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এ সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকে বাজারমূল্য বিবেচনা করার বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতামত চেয়ে গত ১৭ জুলাই চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই চিঠির জবাব পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার নির্দেশনা জারি করা হয়। এর মাধ্যমে এক যুগের বেশি সময় ধরে চলে আসা অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়েছে।

এদিকে টানা তিন সপ্তাহ পতনের পর গত সপ্তাহ বড় ধরনের ঊর্ধ্বমুখীতার মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশের শেয়ার বাজার। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মূল্যসূচকও। এতে এক সপ্তাহেই প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। এর আগে তিন সপ্তাহের টানা পতনে ২৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন কমে যায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা পতনের মধ্যে শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেওয়া এবং পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাবের ক্ষেত্রে বাজার মূল্যের বদলে ক্রয়মূল্য বিবেচনায় নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সম্মতি।

প্রসঙ্গত, শেয়ার বাজারে টানা দরপতন হতে থাকলে গত ২৮ জুলাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে প্রতিটি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। যা কার্যকর হয় গত রোববার থেকে। এতে দাম সমন্বয় করায় রবিবার শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু হতেই সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ে যায়। আর লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। এতে টানা পতন থেকে বেরিয়ে একদিনেই ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ১৫৩ পয়েন্ট।

আর সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার লেনদেনের শেষদিকে শেয়ার বাজারে ছড়িয়ে পড়ে— পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দামের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যকে বিবেচনায় নিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে। এতে একদিকে লেনদেনের গতি বাড়ে, অপরদিকে সূচকের বড় উত্থান হয়।

অবশ্য মঙ্গলবার রাতেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়টি প্রকাশ হতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে বুধবার শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু হয় প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি বাড়ে লেনদেনের গতি। ফলে ডিএসইতে প্রায় তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেনের ঘটনা ঘটে।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুর দিকে শেয়ার বাজারে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও লেনদেনের শেষদিকে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের তথ্য চলে আসে। ফলে সবকটি মূল্যসূচক বেড়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়। এতে সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে।

এতে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল চার লাখ ৯২ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। আগের তিন সপ্তাহের টানা পতনে বাজার মূলধন কমে ২৬ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা।

তথ্য বলছে, বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি গেলো সপ্তাহে ডিএসইতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বেড়েছে। দাম কমেছে সাতটির। আটটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩৩১ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৪৬ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট। বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ১১৯ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৫৫ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট।

প্রধান ও ডিএসই-৩০ মূল্যসূচকের পাশাপাশি টানা তিন সপ্তাহ পতনের পর বেড়েছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও। গত সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ৬৬ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট, আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট।

বাজারের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬৩৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৭৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় তিন হাজার ১৬৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে এক হাজার ৮৮৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বা ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৬৩ কোটি ৬০ লাখ পাঁচ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
‘গুজবে’ কান না দেওয়ার অনুরোধ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার
‘ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ হতে পারে বিনিয়োগের ভালো অপশন’
থ্রি-আই এএমসিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের আবেদন শুরু রবিবার
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন