X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
শেয়ার বাজারে অস্থিরতা

মূলধন কমলো আরও সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা

গোলাম মওলা
২৮ অক্টোবর ২০২২, ২০:১০আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২২, ২০:১০

শেয়ার বাজার নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও উদ্যোগই কাজে আসছে না। গত সপ্তাহে নতুন করে বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছিল ৪ হাজার ৩২ কোটি টাকা। এদিকে শেয়ার বাজারকে স্থিতিশীল করতে তহবিল গঠনের এক বছর পরও বিএসইসির আইনগত বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের শেষের দিকে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করতে বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচুয়্যাল ফান্ডের রক্ষিত অবণ্টিত বা অদাবিকৃত লভ্যাংশের (নগদ ও বোনাস) সমন্বয়ে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) গঠন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যদিও এই ফান্ড গঠনের পর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক আপত্তি জানিয়ে আসছিল।

জানা গেছে,  বিএসইসির আইনে এ ধরনের তহবিল গঠন করার সুযোগ নেই। মূলত বিএসইসি তহবিলটি গঠন করেছে একটি বিধির ক্ষমতায়। যে বিষয়ে আইন নেই, সে বিষয়ে বিধি করার ক্ষমতাও বিএসইসির নেই।

অবশ্য শেয়ার বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকেই ভাবছিলেন যে, আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়ে আসার পর হয়তো বাংলাদেশ ব্যাংক আর কোনও আপত্তি দেবে না। কিন্তু গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসিসহ দেশের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানদের এক সমন্বয় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন এবং ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) কর্মকর্তারা বিএসইসি গঠিত শেয়ার বাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল বা সিএমএসএফ গঠনের আইনি এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। গভর্নর তাদের এই বক্তব্যকে সমর্থন করলে শেষ পর্যন্ত বিএসইসি কমিশনারসহ অন্য কর্মকর্তারাও আইনি বাধার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বিএসইসির পক্ষে নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

পূর্বনির্ধারিত আলোচনার এজেন্ডা হিসেবে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন এবং ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের দুই কর্মকর্তা জানান, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যাংকের অবণ্টিত লভ্যাংশ বিএসইসি গঠিত সিএমএসএফে হস্তান্তর করার সুযোগ নেই। এর ব্যাখ্যায় ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩৫ ধারা উল্লেখ করে তারা বলেন, এখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, অদাবিকৃত নগদ লভ্যাংশ ১০ বছর পর্যন্ত অদাবিকৃত থাকলে, তা সুদসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ টাকা আরও দুই বছর রাখবে। এ সময়ের মধ্যে প্রকৃত দাবিদার দাবি না করলে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

ফলে শেয়ার বাজারকে গতিশীল করার যে নানামুখী উদ্যোগ আব্দুর রউফ তালুকদার নিয়েছেন, তাতেও শেয়ার বাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলের সুফল কবে নাগাদ পাওয়া যাবে, তা বলা মুশকিল।

কারণ, আগের গভর্নর ফজলে কবিরের মতো আব্দুর রউফ তালুকদারও মনে করেন, এ ধরনের ফান্ড গঠন করা শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ নয়।

এদিকে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসই দেশের শেয়ার বাজারে ঊর্ধ্বমুখিতা ছিল। এরপরও দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এতে গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ৪০০ কোটি টাকা কমেছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা।  আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৪৪২ কোটি টাকা।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৭১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বেড়েছে, বিপরীতে দাম কমেছে ৮৪টির। আর ২২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪ দশমিক ৩০ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১০১ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ১১ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩০ দশমিক ৪১ পয়েন্ট।

প্রধান ও ডিএসই-৩০ মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও। গত সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ৪ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১২ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট।

ডিএসই-তে কমেছে গড় লেনদেনের পরিমাণও। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ১৬০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৪৪৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৫ হাজার ৮০১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ২ হাজার ২১৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩২৭ কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
‘গুজবে’ কান না দেওয়ার অনুরোধ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার
‘ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ হতে পারে বিনিয়োগের ভালো অপশন’
থ্রি-আই এএমসিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের আবেদন শুরু রবিবার
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ