X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাগরিবের নামাজটাও পুরো পড়তে দেয়নি, তখনই ব্রাশফায়ার

দিনাজপুর প্রতিনিধি
১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:২৯আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:৩৪

দিনাজপুরের বিরলে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ।

আজ ১৪ ডিসেম্বর, দিনাজপুরের বিরল উপজেলা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর হামলার মুখে পাকসেনারা এ এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। স্বাধীনতার পর প্রতি বছরই এই দিনটি বিরল মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শুরুতেই মুক্তিযোদ্ধাদের হামলার মুখে পাকসেনারা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। ৮ ডিসেম্বর চিরিরবন্দরে মুক্তিযোদ্ধারা ৫১ জন রাজাকারকে বন্দি করে। ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে  চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে অগ্রসর হয় দিনাজপুর জেলা। ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা বিরলে পাক সেনাদের ঘাঁটির ওপর হামলা চালায়। ১১ ডিসেম্বর বিরলে পাকসেনারা হামলা চালিয়ে বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে চলে যায়। ১১ ডিসেম্বরেই বিরলের অধিকাংশ এলাকা মুক্ত হয়ে যায়। ১২ ডিসেম্বরেও চলে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত করার প্রক্রিয়া। ১৩ ডিসেম্বর ভোর থেকে  বিরল উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত এলাকাগুলো মুক্ত করে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা এগুতে থাকে। খানসেনারা মুক্তিবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পিছু হেঁটে দিনাজপুর শহর অভিমুখে যেতে থাকে। খানসেনারা পিছিয়ে যাওয়ার পথে উপজেলার বহলা গ্রামে পাকবাহিনীর সদস্যরা মুক্তিবাহিনী কোথায় আছে এমন প্রশ্ন করলে গ্রামবাসী কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি।

গ্রামবাসীদের কাছ থেকে শোনা গেছে, মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় আছে সে তথ্য দিতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পুরো গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে। সে গ্রামে খানদের ক্যাম্প স্থাপন করার প্রস্তাবেও গ্রামবাসী রাজি না থাকায় তাদেরকে ধরে আনার নির্দেশ দেয় রাজাকারদের। অর্ধ শতাধিক মানুষকে ধরে আনে রাজাকাররা। এরপর গ্রামবাসীদের সারিবদ্ধ করে দাঁড় হওয়ার নির্দেশ দেয়। তখন মাগরিবের সময় হয়েছিল। গ্রামবাসী নামাজ পড়তে চাইলে তাদের নামাজ পড়ার অনুমতি দিলেও মাত্র দু’ রাকাত নামাজ আদায় করার সাথে সাথে আবার তাদের টেনে এনে লাইনে দাঁড় করায় খান সেনারা। এরপর পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা তাদের ওপর ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ৪৩ জন নিরীহ মানুষ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। যাদেরকে একটি গর্তে সমাহিত করা হয়েছিল ঘটনার ৩ দিন পর ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে।

এদিকে ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল বাজনাহার হয়ে পুনর্ভবা নদী পেরিয়ে শহরে প্রবেশ করে। তাদের ধারণা ছিল ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হবেন তাঁরা। তাদের আক্রমণে খানসেনারা পিছু হটে বিরল উপজেলা থেকে সদর উপজেলার কুঠিবাড়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। পরে তারা সৈয়দপুরের দিকে রওয়ানা দেয়। অবশ্য এর আগে পাকসেনারা যাওয়ার সময় কাঞ্চন নদীর লোহার ব্রিজ, ভুষিরবন্দর ব্রিজ, মোহনপুর ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়াসহ দিনাজপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভেঙে দেয়। তারা জেলার আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস করে দেয়। ১৪ ডিসেম্বর ভোর থেকেই সম্মুখ যুদ্ধ ছাড়াই মুক্তিবাহিনী বিরল উপজেলা শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হয়। তাই এ দিনটিকেই বিরল মুক্ত দিবস হিসেবে গণ্য করা হয় এবং বিরল মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

সেই সময়ের দিনাজপুর জেলা জয়বাংলা বাহিনীর প্রধান এবং মুজিব ব্রিগেড ও বিএলএফ’র সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম তালুকদার বলেন, ১৩ ডিসেম্বরেই বিরল উপজেলার সকল এলাকা থেকে চলে গিয়েছিল পাকসেনারা। আর তাই ১৪ ডিসেম্বর বিরল উপজেলা মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে আমরা জেলা শহরে প্রবেশ করেছিলাম ১৫ ডিসেম্বরে। আমরা ছিলাম গেরিলাযোদ্ধা, সাথে ছিলেন মিত্রবাহিনীর সদস্যরা। ওইসময়ে মিত্রবাহিনীর সদস্যরা আমাদেরকে আগাম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে যুদ্ধ হবে না এমন একটি সমঝোতার প্রক্রিয়া চলছে। তাই আমাদেরকে সম্মুখ বা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়েছিল।

আমরা ওই সময়ে অবস্থান নিয়েছিলাম ঐতিহ্যবাহী কান্তনগর মন্দির এলাকায়। সেখানে রাতে আমাদেরকে লক্ষ্য করে মর্টার সেল নিক্ষেপ করেছিল পাকসেনারা। তবে ১৪ ডিসেম্বরের আগেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ধীরে ধীরে শত্রুমুক্ত হয়ে গিয়েছিল।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ