X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোদির বক্তৃতায় ইঙ্গিত: তিস্তা চুক্তি ২০১৮ সালেই?

জুলফিকার রাসেল
০৮ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:০৩আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০১৭, ১২:৫৫

জুলফিকার রাসেল দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতি শেষে একটা বিষয় বোঝা গেলো– ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহুপ্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি হবে দুদেশের বর্তমান সরকারের মেয়াদকালের মধ্যেই।
নরেন্দ্র মোদি তার বক্তৃতায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, ‘আমার এবং শেখ হাসিনার সরকারই শুধু পারবে এই চুক্তি করতে- আর সেটা হবে আমাদের সরকারের মেয়াদের মধ্যেই! মমতা ব্যানার্জি দিল্লিতে এসেছেন, বাংলাদেশকে তিনিও ভালবাসেন – এবং অচিরেই তিনি তিস্তা চুক্তিতে রাজিও হবেন, সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।'
বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন হবে ২০১৯ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে। অন্যদিকে, ভারতে মোদি সরকারের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৯ সালের মে মাসে। তাই ধরে নেওয়া যায়, ২০১৮ সালের মধ্যেই তিস্তা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সময় কতটা, সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন-এই বক্তৃতার মধ্যেই।


বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয়েছিল,এই সফরে না হলেও ২০১৯ সালে বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগেই যাতে তিস্তা চুক্তি করা যায়,দিল্লি সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। এতে রাজনৈতিক লাভ বেশি,সেটাও শেখ হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তৃতা থেকে বোঝা যাচ্ছে,ঘটনাপ্রবাহ ঠিক সেভাবেই এগুচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তার প্রসঙ্গ এনে প্রথমেই ধন্যবাদ জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে,যিনি সরকারের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে শেখ হাসিনার সফরের সময় দিল্লিতে এসেছেন।বৈঠকের এক পর্যায়ে যোগও দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে একাধিক ট্রেন-বাস সংযোগ উদ্বোধন করার সময়ও পাশে ছিলেন। তিস্তা চুক্তির পথে তিনিই প্রধান বাধা সেটা সবারই জানা, কিন্তু নরেন্দ্র মোদি  বললেন,'বাংলাদেশের জন্য মমতা ব্যানার্জির অন্তরের উষ্ণতা আমার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়, সেটা আমি খুব ভাল করে জানি।'

শেখ হাসিনা কিন্তু তার ভাষণে তিস্তা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলেননি । প্রতিরক্ষা সমঝোতা নিয়ে তো কোনো শব্দই উচ্চারণ করেননি।

প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত যে তিনটি সমঝোতা-স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেই তালিকার ২২টির মধ্যে একেবারে শুরুতেই এগুলো ছিল। বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সম্পর্ক এখন একটা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর (ফ্রেমওয়ার্ক) দিকে যাচ্ছে। এখন থেকে নিয়মিত দু'দেশের ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজ এবং ডিফেন্স কলেজগুলোর মধ্যেও বিনিময় চলবে।

এছাড়া শুধু প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম (যার মধ্যে সামরিক হার্ডওয়ার পড়ছে, তবে আর্মস-এর কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি) ক্রয়ের জন্য ভারত বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে (যা ৪৫০ কোটি ডলার লাইন অব ক্রেডিটের অতিরিক্ত)–এটা দিয়ে বাংলাদেশ তাদের প্রতিরক্ষার প্রয়োজন অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারবে।

প্রতিরক্ষা সব সময়ই একটা সংবেদনশীল ব্যাপার, কিন্তু কেন এ ধরনের সমঝোতার প্রয়োজন? থিংকট্যাংক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো জয়িতা ভট্টাচার্য বোঝানোর চেষ্টা করলেন,‘প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দু'দেশের মধ্যে বরাবরই আছে।কিন্তু আগে আমরা দেখেছি ঢাকায় ক্ষমতার পরিবর্তন হলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কেও ওঠানামা চলে।কিন্তু একটা প্রাতিষ্ঠানিক ফ্রেমওয়ার্ক বা সমঝোতা থাকলে তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম।’

বলা যায়, বাংলাদেশে নতুন কোনও সরকার ক্ষমতায় এলে তারা ভারতকে ছেড়ে প্রতিরক্ষা খাতে চীনের দিকে ঝুঁকবে- সেই সম্ভাবনাটা এর মাধ্যমে কমানোর চেষ্টা হলো।

তথ্যপ্রযুক্তি বা সাইবার আক্রমণ সামলাতে এবং সন্ত্রাসবাদে রোধে যৌথ সহযোগিতারও অঙ্গীকার করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেছেন,ভারত যেভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি যেভাবে একটার পর একটা পদক্ষেপ নিচ্ছেন,এর জন্য দিল্লির কাছে ঢাকা কৃতজ্ঞ।

কিন্তু তিস্তা নিয়ে আপাতত খালি হাতে ফেরার পর বাংলাদেশে ফিরে তিনি এই সফরের কোন সাফল্য তুলে ধরবেন, শেখ হাসিনার জন্য সেটাই ভাবনার ।ভারত যতই বাংলাদেশকে ‘গুরুত্বপূর্ণ পার্টনার’বলুক,দুই দেশের আয়তন, জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায় অনেক পার্থক্য থাকায় সমান সমান একটা অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা খুব কঠিন, এই সফরে এই কঠিন বাস্তবতা প্রতিফলিত হল।

আলোচনার টেবিলে একটা বড় দেশ অনেক সময়ই নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ছোট দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে অন্য অনেক জিনিসের স্বার্থে ছোট দেশকে সেটা মেনেও নিতে হয়।ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে সেটা আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে,কিন্তু ভারতের কাছ থেকে প্রাপ্য মর্যাদা পুরোপুরি আদায় করতে পেরেছেন,এরকম দেখাতে হলে শেখ হাসিনাকে শুধু তিস্তা চুক্তি নয়,মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আরও অনেক কিছু করে দেখাতে হবে।

লেখক: সম্পাদক, বাংলা ট্রিবিউন      

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ